“ঢাকা অ্যাটাক”
পরিচালনাঃ দীপংকর দীপন
প্রযোজকঃ মোহাম্মদ আলী হায়দার
রচয়িতাঃ
হাসনাত বিন মতিন,আসাদ জামান,শাহজাহান সৌরভ।
চিত্রনাট্যকারঃ
সানী সানোয়ার,অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়,দীপংকর দীপন।
গল্পকারঃ সানী সানোয়ার
শ্রেষ্ঠাংশেঃ আরফিন শুভ,মাহিয়া মাহি,এবিএম সুমন,শতাব্দী ওয়াদুদ,তাসকিন রহমান,কাজী নওশাবা আহমেদ, আফজাল শরীফ,আলমগীর আরো অনেকে।
ব্যাপ্তিকালঃ ১৪৭ মিনিট
মুক্তিকালঃ ৬ অক্টোবর ২০১৭ (বাংলাদেশ)
২৭ অক্টোবর ২০১৭ (বিশ্বব্যাপী)
আয়ঃ ৳১.০৫ কোটি (১ম দিন)
বাংলাদেশের প্রথম পুলিশী রোমাঞ্চকর নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র। আমাদের দেশে একটা প্রলাপ আছে ধুর বাংলা সিনেমা কেউ দেখে নাকি কেউ যায় হলে! ভুল এটা বলুন বাংলা ভালো সিনেমা হলে কে না যায় হলে! অনেক হলে যাওয়ার প্ল্যানিং করেছিলাম বলাকা,শ্যামলী,সিনেপ্লেক্স কিন্তু কোনোটায়ই সুবিধা করতে পারি নি কেননা সব হাউজফুল টিকেট পাওয়া দুঃসাধ্য তাই চলে গেলাম বাসার কাছেই “সনি সিনেমা” হলে গিয়েই দেখি গেট বন্ধ ৫.৩০ এ টিকেট দিবে যাই হোক ৫.৩০ বাজার সাথে সাথে সবার আগে ভেতরে দৌড়ে ঢুকলাম কিন্তু হায় টিকেট দিচ্ছে না কাউন্টারে 😒পেছনে থাকিয়ে দেখি পুরো জায়গা টইটুম্বুর, কি আর করার ব্লাকে টিকেট কিনলাম অপেক্ষা করতে থাকলাম,হলের দারোয়ানের কাছে খোজ নিলাম কি অবস্থা এই কয়েকদিনে, “ভাই প্রথম থেকে শুরু করে আজ অবধি হাউজফুল,অবাক হলাম একটু পরেই নিজেই দেখলাম যখন সবাই বের হলো, নিজে গিয়ে বসার সাথে সাথে ২-৩ মিনিটের মাথায় পুরো হল ভরে গেলো অনেকে দাঁড়িয়ে পর্যন্ত দেখলো তো যাই হোক বুঝতে আর বাকি নেই খুব ভালো মাপের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পুলিশী অ্যাটাক 😁 তবে এতোটুক “ঢাকা অ্যাটাক” টিম “আয়নাবাজী” টিম শিখিয়েছেন হিরো আলমকে নিয়ে বস্তাপচা “মার ছক্কা” বা গত ঈদে কিং খানকে নিয়ে নকল কাহিনীর কোন সিনেমা বানিয়েও সচেতন দর্শকদের সেভাবে হলমুখী করা যায় নি। এই সচেতনতার জয়জয়কার হোক, আপাতত “ঢাকা অ্যাটাক” নিয়ে আলোচনার বজ্রপাত হোক! ✌
“ঢাকা অ্যাটাক” ছোট পর্দার সফল পরিচালক দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত, ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ বাহিনীর উপ-কমিশনার সানী সানোয়ারের গল্প অবলম্বনে নির্মিত বাংলা ছবি। প্রথমজন বলিউডের স্বনামধন্য এক পরিচালকের সহকারী হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা ঝুলিতে পুরেছেন, দ্বিতীয়জন জঙ্গি ও টেরোরিজম বিরোধী অনেক সফল অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন।২০১৩ থেকে ২ বছর ছবির প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলে, ২০১৫ তে শুভ মহরত, শুটিং শুরুর আবার ২ বছরের মাথায় কাঙ্ক্ষিত ছবিটির মুক্তি… হ্যাঁ, এসব প্রচারণার যথাযথ প্রতিফলনই ঘটেছে পুরো “ঢাকা অ্যাটাক” ছবিতে- পরিচালকের মাধুর্যতা আর গল্পের নানা বাস্তবসম্মত- সুনিপুণ বাঁক দর্শন তারই সাক্ষ্য দেয়!
সিনেমাটোগ্রাফি একটা চলচ্চিত্রের প্রাণ বলায় যায় সেটাকে অনেকেটা প্রমাণ করেছেন বললে ভুল হবে ভালোই প্রমাণ করেছে খন্দকার নাদিম ফুয়াদ সহ একাধারে ৫ জন চিত্রগ্রাহক।তাদের সুনিপুণ প্রতিফলন বিভিন্ন ক্লোজ-লং-ড্রোন শটে পাওয়া যায়-সর্বোপরি একটা অ্যাকশন থ্রিলার ফিল্মে- শহরের রাস্তা থেকে দুর্গম জঙ্গলে পুলিশ অপরাধীদের খোঁজে হানা দিচ্ছে, তল্লাশি করছে- সেসব দৃশ্য এতটা আধুনিক, বাস্তবসম্মত ও বেশ আকর্ষণীয়ভাবে এই মুভিতে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তার কৃতিত্ব চিত্রগ্রাহকদের প্রাপ্য তো বটেই!
একটা ব্যাপার খুব দারুণ আপনারা দেখবেন প্রথমবারের মতোন, ভিলেনের সাথে নায়ক ডিসিয়া, ডিসিয়া ফাইটের পর পুলিশ “হ্যান্ডস আপ” বলে ছুটে আসবে- এমন গৎবাঁধা কোন কিছু চোখে আসবে না- যা খুবই ভালো দিক এবং আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের নিরিখে এই “ঢাকা অ্যাটাক” ছবির জন্য বিরাট সাফল্য! অন্তত আমি মনে করি ✌
এবার চলুন আলোচনা করি বোমা নিস্ক্রিয়করণ বিশেষজ্ঞ আবিদ সাহেবকে নিয়ে (আরেফিন শুভ), প্রথম বিষয় যেটা মানে যেটা নিয়ে অনেকের অনেক কানাঘুষা ঐ যে তেলতেলে ভাব মানে আর কি জেলজেলে ভাব 😜 স্টাইলটা একটু কেমন লাগলেও তার অভিনয় বলতে গেলে বেশ মাপমতই হয়েছে। ভারত্ব একটি চরিত্রে ভারিক্কী ড্রেস পরে অনেক করিৎকর্মা ভাবই দেখিয়েছেন,যে নায়ক বিভিন্নধর্মী চরিত্রগুলোর জন্য নিজেকে আলাদাভাবে তৈরির চেষ্টাটা করে থাকেন!আমার মনে হয় না বর্তমান আমলে তাঁর গুরুত্ব ফেলে দেওয়ার মতো নয়! তাঁর এক্সপ্রেশনের ভাবটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে বোমা ডিজপোজালের ভাগটা। জ্যাজের আলোকে আরেফিন শুভ তেমন আলোকিত হতে না পারলেও টাইগার মিডিয়ার আলোকে বলা যায় এটা তাঁর সেরা ছবি গুলোর মাঝে সব সময় স্থান শক্ত করে রাখবে।
দ্বিতীয় নায়ক পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট কমান্ডার চরিত্রে এবিএম সুমন। এর আগে উনার কিছু মিউজিক ভিডিও ছাড়া আর কাজ দেখা হয় নি- তবে আজ যা দেখলাম, পুলিশ কম্যান্ডার চরিত্রটিকে আবেগ ও অ্যাকশন দিয়ে খুব চমকপ্রদ ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন এই অভিনেতা।প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার তিনি, ভবিষ্যৎ এ আমরা যে আরো ভালো কিছু পাবো তাঁর কাছ থেকে এটা বলা বাহুল্য।
শতাব্দী ওয়াদুদ বলতে গেলে তিনি এক ভরসার নাম ✌ তাঁর অভিনয় দেখে আজ অবধি কখনো হতাশ হই নি, তিনি তাঁর শক্তিশালী অভিনয় দিয়ে তা কখনো ভাবতেই দেয় নি।বেশ গুরুত্ববহনকারী চরিত্রকে তিনি বেশ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন।
চরিত্রানুযায়ী আফজাল হোসেন, আলমগীর, হাসান ইমামের মত অভিজ্ঞ অভিনেতাদের কমিশনার, আইজি, মন্ত্রীর চরিত্রে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য দেখা গেছে সেখানেও বেশ সাবলীলতা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে আর যাবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তাদের আরও সম্পৃক্ত করে আরেকটু ব্যাপ্তি হয়তো দেয়া যেত তাহলে আরো কিছুটা ভালোর মাঝে ভালো আবদ্ধ হতো।
এছাড়া যারাই ছিলেন শিপন তাঁর ব্যাপ্তি অনুযায়ী দারুণ সাবলীল ছিলেন,মোট কথা গুণ্ডা-মাস্তানের চরিত্রেও যারা অভিনয় করেছেন-প্রায় সব পুরুষ অভিনেতারাই চরিত্র অনুযায়ী প্রায় সেরা অভিনয় করেছেন বলে আমার মনে হয়।
এবার আসি নারীকুলের দিকে, আফসোস একটাই “আয়নাবাজীতে” নাবিলা খুব স্বল্প সময়ই স্ক্রীনে ছিলেন কিন্তু যতো টুকুই ছিলেন বেশ ছিলেন।মাহী যে একবারে খারাপ করেছে তা কিন্তু না রিপোর্টিং পার্ট গুলোতে বেশ দারুণ ছিলো মানে এক কথায় সাবলীল ছিলেন কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় কেমন জানি লাগলো তাকে যাই হোক এতো ভালোর মাঝে ধরেই নিলাম অতিরিক্ত ভালোবাসার ফল এহেন ন্যাকামী 😁
আমরা অগ্নির মাহীকে চাই সব সময় দোয়া রইলো আর আপনি এমনিতেও এ যুগের চলচ্চিত্রের আশার আলোর বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে আছেন আপনার কাছে একটাই আশা নিজেকে আলাদা আলাদা চরিত্রের জন্য প্রস্তুত করুণ আশার আলোকে আরো প্রোজ্জ্বলিত করুন এই প্রত্যাশাই রইলো।
আরেকটা মেয়ে নওশাবা সব বাদ দিয়ে উনার প্রেগনান্সির জ্বালা-যন্ত্রণা উপস্থাপন আর চোখের জল এগুলোর জন্য বেশ প্রশংসনীয় করা যাবে চোখ বন্ধ করে।
ও হ্যা আর একটা কথা ট্রেইলার দেখে অনেকেই এর ভি এফ এক্স নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ভাই থামেন বা একটু ছাড় দেন আমরা এগোচ্ছি তো তাই না প্লিজ একটু সময় দিন। আর বড় পর্দায় কোনো বিস্ফোরণই কিন্তু খারাপ লাগে নি রক্তের ব্যাপার গুলোও কিন্তু বাস্তবিকই লেগেছে। অনেকে আবার গানের প্লেসমেন্ট নিয়েও কথা বলেছেন কই না তো সব গানের প্লেসমেন্ট তো একবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয় বরং দারুণ মানিয়েছে তবে টুপটাপ গানের ইউটিউব ভার্শনের কালার কারেকশন এডিটিং কিন্তু বেশ ভালো মানের ছিলো।
হ্যা ভাই এবার আসি সকলের গুঞ্জনে মুখরিত ভিলেন,শয়তান তাসকিন রহমানের কাছে 😁 মনে রাখবেন এ ভিলেন কিন্তু “ছেড়ে দে শয়তান” টাইপ ভিলেন না।একটু অন্য ভঙ্গীমার ভিলেন। ভিলেন কে এইরকম ডিটেইল ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখানো মনে হয় না আর কোনো বাংলা সিনেমায় দেখানো হয়েছে এ জন্য দুটো ক্লাপ পাবেন “দিপংকর দিপন” সাহেব 👏
তার নৃশংসতা, বাইক চালনা বা ছোট্ট ওয়্যার অ্যাকশন সবকিছুতেই একটা ভিলেন-ভিলেন কিন্তু স্টাইলিশ ভাব। মোট কথায়, একেবারে বাজিমাত করেছেন এই ভিলেন তাসকিন রহমান, সেকেলে খলনায়কত্বকে কিঞ্চিত অসাড় প্রমাণ করে নতুনের জয়ধ্বনি করেছেন তিনি, তিনিও দুটো ক্লাপ পাবেন 👏 আমি আশা রাখি এ বছরের সেরা ভিলেনের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার তাঁর ঘরেই শোভা পায়।
কিছু জিনিষ কেমন জানি লাগলো!
১। মালয়েশিয়ান নারী পুলিশ বাদে বাকি নারী চরিত্রগুলোর অভিনয়ে,মেকআপে একটু কৃত্রিম ভাব ছিল যেজন্য তাদের কিছু ইমোশনাল পার্ট থাকলেও তাদের প্রতি তেমন মায়া জাগে নি।
২। স্কুল বাস তো পিকনিকে যাচ্ছিলো না তবে এমন ন্যাকাভাব কেনো? পিকনিকের বাস হলে মেনে নিতাম সমস্যা ছিলো না।
৩। কুল শেভিং ক্রিমের এড পাওয়া যায় কিন্তু বডি স্প্রে কেমন জানি লাগলো!
৪। একটা জিনিষ খেয়াল করলাম ইংরেজী-মালয় ভাষার সাবটাইটেলে কিছু বানান ভুল দেখলাম, এমন কমার্শিয়াল ফিল্মে এহেন কর্ম কেমন জানি, নজর দেওয়া উচিৎ ছিলো।
৫। ভিলেন তো সব হারিয়েছেন মানে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাহলে তাঁর এত্তো এত্তো কাজ কর্মের জন্য টাকা পয়সার যোগানের কিছু অংশ দেখালে হয়তো ভালো হতো,তবে এতো ভালোর মাঝে টুকটাক চুপচাপ মন্দ ছেড়েই দিলাম আশা করি এমন বুঝতে পেরে আক্রমণ দল 😁 ✌
শেষ কথা একটাই ঢাকা অ্যাটাক শুভ মাহির না বলে শুভ পর্দার আড়ালে থাকা সুমন,তাসকিনের বলা উচিৎ মানে ঢাকা অ্যাটাক কে শুভ,তাসকিন,সুমনের চলচ্চিত্র বলা যেতে পারে এতেই মনে হয় সৌন্দর্য মন্ডিত হবে।
যাই হোক এই ফিল্মের কলকব্জা থেকে শুরু করে নাটের গুরু সবাইর উদ্দ্যেশে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। বড় পর্দায় এই ফিল্ম না দেখলে দারুণ মিস করবেন।না দেখে থাকলে আজই চলে যান আপনার নিকটস্থ সিনেমা হলে ✌ জয় হোক বাংলা সিনেমার ✌ আমার নিজস্ব মতামতঃ ৯/১০