-

রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি? যেভাবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করতে পারেন

রিয়েল এস্টেট শব্দটি শুনলেই আমাদের মাথায় আসে স্থাপনা/ বাড়িঘর/ এপার্টমেন্ট ইত্যাদি নির্মাণের কাজ। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। কারণ এখন চলছে উঁচু উঁচু স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতা।

বিশেষ করে শহরগুলোতে এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রি গুলোর চাহিদা ব্যাপক। তাই বর্তমানে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য রিয়েল এস্টেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আপনার যদি বড় ধরনের ব্যবসা করার ইচ্ছা, বড় মূলধন এবং ভাল অর্থনৈতিক জ্ঞান থাকে, তাহলে আপনিও এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।

Real Estate ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ যেমন বেশি, তেমনি আয়ের মার্জিনও হয় কোটির টাকার ঘরে। তাই রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি এবং কেভাবে আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন, সে সম্পর্কে এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।

রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি?

রিয়েল এস্টেট বলতে বিভিন্ন জমি, সম্পত্তি, স্থাপনা/ বাড়িঘর/ এপার্টমেন্ট নির্মাণ, প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি উপাদানকে বুঝানো হয়। এ ধরনের সম্পদ কেনা-বেচা করা, ভাড়া দেওয়া, নির্মাণ করা, দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের ব্যবসাকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বলা হয়।

রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কাজ কি?

একটি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই এই ব্যবসার কার্যক্রম গুলো সম্পর্কে জানতে হয়। আপনি এ ধরনের কোম্পানি গঠন করলে কি কি কাজ করে উপার্জন করতে পারবেন সে সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কাজ কি কি, সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো:

(১) রিয়েল এস্টেট কোম্পানির প্রধান কাজ হলো সম্পত্তি বেচাকেনার প্রক্রিয়াকে সহজ করা। এসকল কোম্পানি গুলো ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ, দরদাম নির্ধারণ থেকে শুরু করে লেনদেনের যাবতীয় আইনি কার্যাবলী সম্পন্ন করে থাকে।

(২) সম্পত্তির সঠিক মূল্য নির্ধারণেও রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে তারা বর্তমান বাজার বিশ্লেষণ করে সম্পত্তির দাম নির্ধারণ করে দেয়।

(৩) বর্তমান বাজারের ট্রেন্ড, দাম এবং চাহিদার তথ্য বিশ্লেষণ করে ক্লায়েন্টদের/ বিনিয়োগকারীদের জন্য সঠিক ধারণা দেয়।

(৪) অধিকাংশ রিয়েল এস্টেট কোম্পানির উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হলো এই কোম্পানিগুলো আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে এবং তারপর সেগুলো বিক্রি বা লিজিংয়ে দেয়।

(৫) এ ধরনের কোম্পানিগুলো প্রপার্টি ম্যানেজমেন্টের জন্যও দায়িত্ব নেয়। এক্ষেত্রে তারা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সম্পত্তির দেখাশোনা, রক্ষণাবেক্ষণ, ভাড়া সংগ্রহ এবং ক্লায়েন্টদের সম্পত্তির কেয়ারটেকার নিয়োগেরও কাজ করে থাকে।

(৬) দরদাম নির্ধারণ করে কোম্পানির আওতাধীন সম্পত্তি লিজ বা ভাড়া দেয়।

এছাড়াও এ ধরনের কোম্পানিগুলো বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগ করে নানান প্রজেক্ট বিনিয়োগ করে থাকে।

রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করার নিয়ম 

Real Estate Business in Bangladesh

একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য বেশ একটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। আপনি কিভাবে আপনার Real Estate ব্যবসা শুরু করতে পারেন এবং কিভাবে পরিচালনা করবেন, সে সম্পর্কে নিচে জেনে নিন:

(১) ব্যবসায়ের পূর্ব পরিকল্পনা করা

যেকোনো ব্যবসা শুরুর পূর্বে, সেই ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃস্থ বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ব পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিত। তাই আপনার ব্যবসার মূলধন কিভাবে সংগ্রহ করবেন, কি কি সার্ভিস নিয়ে কাজ করবে, টার্গেটেড কাস্টমার কারা হবে, আপনি কতটুকু ঝুঁকি নিতে পারবেন ইত্যাদি বিষয় আগে থেকেই বিচার-বিশ্লেষণ করে নিবেন।

(২) বিনিয়োগের জন্য পুঁজি সংগ্রহ

এ ধরনের ব্যবসায় অনেক বেশি পুঁজি/ মূলধনের প্রয়োজন হয়। স্থায়ীভাবে নিজস্ব একটি অফিস নির্মাণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজেক্টে ইনভেস্ট করার জন্য প্রাথমিক মূলধন অনেক বেশি প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে আপনি কোন কোন মাধ্যম থেকে এবং কি পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করতে পারবেন, তা আগে থেকেই জেনে নিতে হবে।

(৩) ব্যবসার জন্য অফিস স্থাপন করা

এ ধরনের ব্যবসার জন্য একটি স্থায়ী অফিস থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া রিয়েল এস্টেট ব্যবসার লাইসেন্স পেতে অফিসের গুরুত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার টার্গেটেড কাস্টমারদের এরিয়াতে একটি অফিস নির্মাণ করতে পারেন।

খেয়াল রাখবেন, আপনার অফিসের গঠন, কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় বিভিন্ন ক্লাইন্টদেরকে প্রভাবিত করতে পারে। 

(৪) রিয়েল এস্টেট ব্যবসার লাইসেন্স/ নিবন্ধন করার নিয়ম

Real Estate Business শুরু করার জন্য আপনাকে 

Real Estate ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই ব্যবসার লাইসেন্স তৈরি করতে হবে। এর জন্য আপনাকে একজন অভিজ্ঞ ডেভলপার হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। এ ধরনের ব্যবসা অত্যন্ত অভিজ্ঞতার সাথে পরিচালনা করতে হয়। অন্যথায়, কোম্পানি তৈরি প্রজেক্টগুলোতে দুর্ঘটনা হয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। 

তাই এই ব্যবসা নিবন্ধনের জন্য আপনার প্রয়োজন হবে:

  • আপনার কোম্পানির কারিগরি ব্যক্তিদের যোগ্যতার প্রমাণপত্র।
  • ট্রেড লাইসেন্স। 
  • TIN Certificate.
  • REHAB কিংবা Land Developers Association এর অধীনে সদস্যপদ।
  • Memorandum of Association ও Articles of Association এবং Certificate of Incorporation.

লাইসেন্স করা বা ব্যবসা-নিবন্ধন করার জন্য কি কি বিষয়বস্তু মানতে হবে, তা এই লিংকে জানুন: bdlaws.minlaw.gov.bd। এছাড়াও ভূমি ও সম্পত্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন-কানুন সম্পর্কে জেনেই ব্যবসা শুরু করতে হবে।

(৫) কোম্পানির প্রচার-প্রচারণা ও নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি

একটি সফল রিয়েলি এস্টেট কোম্পানি তৈরি করার জন্য প্রচার-প্রচারণা ও নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করা অত্যন্ত জরুরী। সাধারণত এ ধরনের কোম্পানি গুলো শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে ক্লায়েন্ট পায়না। বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্লায়েন্ট না পেলে ব্যবসার প্রসার প্রায় অসম্ভব।

তাই বিভিন্নভাবে মার্কেটিং করে কোম্পানির যথাযথ প্রচার-প্রচারণা করতে হবে এবং একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

(৬) অর্থনীতির জ্ঞান অর্জন করা

Real Estate ব্যবসার বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ শুরুর আগেই সে প্রজেক্টর আয়-ব্যয় বিবরণী তৈরি করে নিতে হবে। অর্থাৎ, আপনি কোন প্রজেক্ট এর কাজ করলে সেখানে কত টাকা ব্যয় হতে পারে, কি কি খাতে ব্যয় হবে এবং কত টাকা লাভ হবে ইত্যাদি আগে থেকেই হিসাব-নিকাশ করে নিতে হবে। 

অর্থনৈতিক বিষয়ে আপনার ধারণা যত বেশি থাকবে প্রজেক্ট এর হিসাব ততই নিখুঁত হবে। এভাবে প্রজেক্ট এর সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

রিয়েল এস্টেট মার্কেটিং কি? যেভাবে আপনার কোম্পানির মার্কেটিং করবেন

রিয়েল এস্টেট মার্কেটিং বলতে সম্পত্তি বিক্রয়, লিজিং, অথবা ভাড়ার জন্য সম্ভাব্য ক্রেতা বা ভাড়াটেদের আকৃষ্ট করার বিভিন্ন কৌশলকে বুঝানো হয়। সাধারণত একটি দেশে অনেকগুলো সুপ্রতিষ্ঠিত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি থাকে। তাই কাস্টমার পেতে সেসকল কোম্পানিগুলোকে পেছনে ফেলে কাস্টমারকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্নভাবে মার্কেটিং করতে হয়। 

এ ধরনের কোম্পানির মার্কেটিং এর অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে অ্যাডভার্টাইজিং করা। এছাড়াও আর বিভিন্ন উপায়ে সাধারণ মানুষের কাছে আপনার কোম্পানির সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা করা সম্ভব। যেমন:

(১) কোম্পানি লিস্টিং করা

বিভিন্ন প্রপার্টি ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপনার কোম্পানির নাম অনলাইন লিস্টিং করা। এসব লিস্টিংয়ে বিস্তারিত বিবরণ, উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি এবং কোম্পানির বিভিন্ন সম্পত্তির আকর্ষণীয় ভিডিও ফুটেজ দিতে পারেন। 

(২) সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এবং লিংকডইন-এর মতো বড় সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে কোম্পানির নামে পেজ খুলতে পারেন। তারপর সেই পেজ থেকে আপনাদের সার্ভিসগুলো বেশি বেশি শেয়ার করা, পেইড অ্যাড চালাতে হবে। পাশাপাশি ফলোয়ারদের বিভিন্ন কমেন্ট ও মেসেজের রিপ্লাই দেওয়ার জন্য একজন মডারেটর নিয়োগ দিতে পারেন।

(৩) কন্টেন্ট মার্কেটিং করা

আপনার কোম্পানির সার্ভিস সমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে কন্টেন্ট মার্কেটিং করতে পারেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সম্পত্তি কেনার পরামর্শ দিয়ে স্থানীয় বাজার বিশ্লেষণ করে তথ্যবহুল কন্টেন্ট এবং ভিডিও পাবলিশ করতে পারেন।

(৪) আপনার কোম্পানির ওয়েবসাইট SEO করা

বাংলাদেশের বড় বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। তাই আপনার কোম্পানির নামেও একটি পার্সোনাল ডোমেইন নিতে হবে। তারপর সেই ওয়েবসাইটে কোম্পানির সার্ভিস গুলো সম্পর্কে আলাদা আলাদা কন্টেন্ট লিখতে হবে এবং SEO বা (Search Engine Optimization) করে সে কন্টেন্টগুলোকে গুগল সার্চ রেজাল্টের প্রথমদিকে নিয়ে আসতে হবে।

এছাড়াও আপনার ওয়েবসাইটের পেইড এডভার্টাইজিংও করতে পারেন। দেশের বড় বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো এভাবে অসংখ্য ক্লায়েন্ট পাচ্ছে। 

(৫) ইমেইল মার্কেটিং করা

নিয়মিত নিউজলেটার এবং ইমেইল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আপনার টার্গেটেড কাস্টমারদের কাছে কোম্পানির সার্ভিস গুলোর তথ্য ইমেইল পাঠাতে পারেন।

(৬) কোম্পানির বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করা

আপনার কোম্পানিতে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পপতিদের এবং টার্গেটেড কাস্টমার কেয়ার আমন্ত্রণ করতে পারেন। তারপর আপনাদের বিভিন্ন লক্ষ্য ও প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করে সেগুলোর সুবিধা সম্পর্কে সকলের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। কিভাবে বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হয়ে আপনার ক্লায়েন্ট হতে পারে।

শেষকথা

উপরোক্ত আলোচনার বিষয়বস্তু ছাড়াও আরো বিভিন্নভাবে ব্যবসা শুরুর আগে বিস্তার পরিকল্পনা করতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসা শুরুর পর বিভিন্নভাবে আপনার কোম্পানির মার্কেটিং করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, যত বেশি প্রচার-প্রচারণা হবে ক্লাইন্ট পাওয়ার সম্ভাবনাও ততই বেশি।

সর্বশেষ প্রকাশিত