নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে রাখতে হয় কেন?
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
নখ ও চুল কাটার পর তা দাফন করে ফেলা সুন্নত। মহানবী (সা.) তাঁর নখ, চুল ইত্যাদি কাটলে তা দাফন করে ফেলতেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি হিজামা করালেও তাঁর রক্তগুলো দাফন করে ফেলার হুকুম দিতেন। মহান আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন, তাদের অঙ্গগুলোও সম্মানিত। তাই তাদের অঙ্গের সঙ্গেও এমন ব্যবহার করা যাবে না, যা তাদের সম্মান হানি করে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর আমি মানব সন্তানকে সম্মানিত করেছি…।’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ৭০)
মানুষের চুল, নখ, রক্ত, অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদিও তাদের অঙ্গ। এগুলোকে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া উচিত নয়। হজরত মিল বিনতে মিশরাহ আল আশআরি থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা মিশরাহ [যিনি রাসুল (সা.)-এর সাহাবি ছিলেন]-কে দেখেছেন যে তিনি নখ কাটার পর তা দাফন করে ফেলতেন। তিনি বলতেন, তিনি রাসুল (সা.)-কে এমন করতে দেখেছেন। [আত তারিখুল কুবরা (ইমাম বুখারি) : ৮/৪৫]
ইমাম আহমদ (রহ.)-কে এক ব্যক্তি কর্তিত চুল ও নখের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘এগুলো কি দাফন করব নাকি ফেলে দেব?’ তিনি বলেন, ‘দাফন করে ফেলো।’ লোকটি বলল, ‘আপনি এ ব্যাপারে কিছু পেয়েছেন?’ তিনি বলেন, ‘ইবনে ওমর (রা.) এগুলো দাফন করে ফেলতেন।’ (আল মুগনি, ইবনে কুদামা : ১/১১০)
তা ছাড়া এসব জিনিস দাফন না করলে এগুলোর অপব্যবহারও হতে পারে। কিংবা এগুলোর মাধ্যমে রোগ-জীবাণুও ছড়াতে পারে। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি তার কেটে ফেলা চুল সঠিকভাবে দাফন না করে, তাহলে তা বাতাসে উড়ে খাবারে বা পানিতে মিশে যেতে পারে। ফলে তার সঙ্গে লেগে থাকা জীবাণু পেটে গিয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
অনেকে আবার কেটে রাখা চুল বিক্রি করে দেন, যা শরিয়তে নিষিদ্ধ। কারণ মানব অঙ্গ বিক্রি করা শরিয়তে জায়েজ নেই। সাধারণত এই চুলগুলো বিদেশে বিক্রি হয়ে যায়। এগুলো দিয়ে সাধারণত পরচুলা, এক্সটেনশনে পরিণত করা হয়। উন্নত বিশ্বে এসবের অনেক দাম। ২০১৭ সালে চুল রপ্তানি থেকে মিয়ানমারের আয় ছিল ৬.২ মিলিয়ন ডলার। (ডি ডাব্লিউ)
এর চেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, মানুষের চুল থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বানানো হচ্ছে হীরা। চুল থেকে কার্বন কণাকে বের করে নিয়ে তা দিয়ে হীরা তৈরি হয়। এ পদ্ধতিতে হীরা তৈরির জন্য পশ্চিমা বিশ্বে অনেক কম্পানি গড়ে উঠেছে। তারা এ ব্যবসায় করে উপার্জন করছে কোটি কোটি ডলার। কিন্তু এটিও মানব অঙ্গের সম্মানহানি করে। কারণ মানব অঙ্গকে অলংকার হিসেবে ব্যবহার করাও তার সম্মানহানি করে।
বর্তমান যুগে মানুষের চুল বা অন্যান্য অঙ্গ থেকে তার ডিএনএ ক্লোন করা সম্ভব। যার মাধ্যমে যে কাউকে বড় কোনো অপরাধে ফাঁসিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
কেউ কেউ আবার মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ ব্যবহার করে তার অনিষ্ট করার জন্য জাদু টোনাও করতে পারেন। এসব করার সুযোগ সৃষ্টি হয় মানব অঙ্গের যথাযথ সংরক্ষণ না করার ফলে। তাই আমাদের উচিত আমাদের কেটে ফেলা চুল, নখ ইত্যাদির যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা। এগুলো সংরক্ষণের সঠিক স্থান কী হবে, সে ব্যাপারে ইঙ্গিত রয়েছে পবিত্র কোরআনেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কি পৃথিবী সৃষ্টি করিনি ধারণকারিণীরূপে—জীবিত ও মৃতদের?’ (সুরা মুরসালাত, আয়াত : ২৫-২৬)
তাফসিরে কুরতবিতে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে এই আয়াতের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা ও মানুষের চুল ও পড়ে যাওয়া অঙ্গ দাফন করার বিধান প্রমাণিত হয়। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘এই মাটি থেকেই আমি তোমাদের সৃজন করেছি, এতেই তোমাদের ফিরিয়ে দেব, এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদের উত্থিত করব। (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৫৫)
তাই যেভাবে মানুষের গোটা দেহের হায়াত শেষ হয়ে যাওয়ার পর মাটিতে সমর্পিত করতে হয়, তেমনি তার কোনো অঙ্গের হায়াত শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা মাটিতে দাফন করতে হয়।
মহান আল্লাহ আমাদের বিষয়টি উপলব্ধি করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।