আপনার কি কখনো জানতে ইচ্ছে হয়েছে সাবমেরিন কিভাবে কাজ করে? অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে সাবমেরিন কিভাবে চলে এবং কিভাবে পানিতে ভাসে ও আবার পানির নিচে চলে যায়। বিষয়টি তেমন জটিল কিছু না সাবমেরিন মূলত কাজ করে প্রাচীন গ্রীক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের “ব্যালাস্ট ট্যাঙ্ক থিওরী” উপর ভিত্তি করে।এই থিওরীর উপর ভিওি করেই ১৬২০ সালে কর্ণেলিয়াস জ্যাকবসজুন ড্রেবেল নামীয় একজন ডাচ কর্তৃক প্রথম নৌযানবাহন হিসেবে সাবমেরিন আবিস্কার করেন।
ব্যালাস্ট ট্যাঙ্ক থিওরী হল কোন অদ্রব্য বস্তুকে পানিতে ডোবালে তা নিজের আয়তনের সমপরিমান পানি অপসারিত করবে। সোজা কথায় অপসারিত পানির ভরের থেকে পানিতে ডোবানো জিনিসটি যদি হালকা হয় তবে তা ভেসে থাকতে পারে।বিষয়টাকে আরও সহজে ও ভেঙ্গে বলছি যাতে আপনারা সহজে বুঝতে পারেন ।
একটি খালি প্লাস্টিকের বোতলে যদি বাতাস ভরা হয় তখন কিন্ত বোলতটি পানিতে ভেসে থাকবে। ঠিক যদি আবার বোতলটিতে নতুন করে পানি ভর্তি করে দেওয়া হয় তবে সকল বাতাস বের হয়ে যাবে বোতলটি ভারী হয়ে গিয়ে পানিতে ডুবে যাবে। আবার যদি অর্ধেক বাতাস বোতলে রাখা হয় তবে বোতলটি অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় ভেসে থাকবে সেইম সূত্র অবলম্বন করে সাবমেরিন পরিচালিত হয়।
একই সূত্র ফলো করে সাবমেরিনে কিছু ব্যালাস্ট ট্যাংকার থাকে এর ভিতরে পানি ও বাতাস ডুকানো হয় যন্ত্রের সাহায্যে। যখন সাবমেরিন ডুবানোর দরকার পরে তখন এইসব ব্যালাস্ট ট্যাংকারে পানি ডুকিয়ে দেওয়া হয় ফলে সাবমেরিনটি ভারী হয়ে পানিতে ডুবে যায়। আবার যখন ভাসানোর দরকার পরে তখন ব্যালাস্ট ট্যাংকারের পানি গুলি বের করে যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত বাতাস ডুকতে থাকে ফলে সাবমেরিন পানির উপরে ভেসে উঠে।
তবে এতে করে সাবমেরিনের ভিতরে চাপের কোন পরিবর্তন হয়না কারণ হল এতে উন্নত মানের ষ্টীল, টাইটেনিয়ামের মতন ধাতু ব্যাবহার করা হয়। এইসব ধাতুর কারণে শুধু সাবমেরিনের ভিতরে নয় এর বাইরেরও পানি প্রচণ্ড চাপ সহ্য করার মতন ক্ষমতা থাকে।
সাবমেরিনের ভিতরে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে অক্সিজেন তৈরি করা হয়।
অনেকে প্রশ্ন করেন পানির কত নিচে পর্যন্ত যেতে পারে সাবমেরিন। আসলে সাবমেরিনের একটা নিদিষ্ট রেঞ্জ থাকে সেই রেঞ্জের নিচে গেলে সাবমেরিনটির দুর্ঘটনায় ঘটবে । বর্তমানের আধুনিক সাবমেরিন গুলি মধ্যে সবচেয়ে বেশী চাপ নিতে সক্ষম মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন ও রাশিয়ান সাবমেরিনগুলি, মার্কিন সাবমেরিন গুলি ৪৫০০ ফুটের নিচে যেতে পারে না। যদি যায় তবে পানির বিশাল চাপে সাবমেরিন চ্যাপ্টা বানিয়ে ফেলবে।
সাবমেরিন কতদিন পানির নিচে থাকবে তা নির্ভর করে মূলত কতদিনের জ্বালানি আছে ও ক্রদের খাদ্য কি পরিমাণ রিজার্ভ আছে। যদি ডিজেল সাবমেরিন হয় তবে ডিজেল নেভার জন্য কিছুদিন পরেই উপরে আসতে হয়। আর যদি পারমাণবিক সাবমেরিন হয় তবে একবার জ্বালানি নিয়ে এটি একটানা ২৫ বছর বা আরও বেশী সময় পানির নিচে থাকতে পারবে কিন্ত ক্রদের খাদ্যর জন্য তাকে উপরে আসতেই হবে।কারণ পারমাণবিক সাবমেরিন নিজে ২৫ বছর বা আরও বেশীদিন পানির নিচে থাকতে পারবে কিন্ত ভিতরের মানুষের জন্য ৬ মাস পরে উপরে আসতেই হবে। সাবমেরিনে ৬ মাসের বেশী খাবার মজুদ রাখা যায় না।
আশা করি সাবমেরিন নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবেন।