শেষ হলো ২০১৮। বিজ্ঞানের খাতায় যোগ হলো নতুন অনেক আবিষ্কার এবং উদ্ভাবন।বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য এই বছরটি স্বরনীয় হয়ে থাকবে।২০১৮র সেইসব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার এবং উদ্ভাবন নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। চলুন দেখে নেই ২০১৮ এ বিজ্ঞানের অগ্রগতি।
৩ জানুয়ারি ২০১৮:রোমে বিজ্ঞানীরা স্পর্শের অনুভূতিসম্পন্ন প্রথম বায়োনিক হাত উন্মোচন করেন।
৫ জানুয়ারি: কিউরিঅসিটি রোভারের তোলা একটি ছবিতে নাসার গবেষকরা অদ্ভুত আকৃতির কিছু পাথরের সন্ধান পান। যেগুলো খতিয়ে দেখলে হয়তো জানা যাবে মঙ্গলে প্রান ছিল কিনা।
MITর বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটার চিপ ডিজাইন করেন যাতে কৃত্রিম সিনাপস ব্যাবহার করা হয়েছে। অর্থাত্ এটি মানুষের মস্তিষ্কের মতোই কাজ করতে পারবে।
৫ ফেব্রুয়ারি 2০১৮: গবেষকরা এক নতুন ধরনের পানির সন্ধান পান যার নাম দেন “সুপারআয়নিক পানি” যা পৃথিবীতে পাওয়া না গেলেও ইউরেনাস কিংবা নেপচুন গ্রহে প্রচুর পরিমাণে থাকতে পারে।
৬ ফেব্রুয়ারি: ইলন মাস্কের মালিকানাধীন আমেরিকা-ভিত্তিক বেসরকারি রকেট উৎক্ষেপনকারী প্রতিষ্ঠান স্পেস-এক্স এর ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট ফ্যালকন-9 সফলভাবে উৎক্ষেপন করে। এটি এ যাবত কালের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালি রকেট।এর ওজন প্রায় সাড়ে পাচ লাখ কেজি এবং এটি ৭০ মিটার উচু।
১৬ ফেব্রুয়ারি: বিজ্ঞানীরা নতুন এক প্রকৃতির আলো আবিষ্কার করেন যা কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।
৫ মার্চ 2০১৮: গুগল “ব্রিস্টকন” নামের একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার চিপ তৈরির খবর প্রকাশ করে। এটি এপর্যন্ত তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার চিপ যার ক্ষমতা হচ্ছে ৭২ কিউবিট(কোয়ান্টাম বিট)।
১৮ এপ্রিল: বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তাদের TESS স্যাটেলাইট লঞ্চ করে যার কাজ হলো সৌরজগতের বাইরে অন্যান্য নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা গ্রহসমুহের সার্ভে করা।
৫ মে ২০১৮: নাসার ইনসাইট(InSight) ল্যান্ডার লঞ্চ করা হয়। এটি মঙ্গলে অবতরণ করবে এবং মঙ্গলের পৃষ্ঠতলে পানি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে। একই সাথে এটিই হবে একমাত্র রোভার যা কিনা মঙ্গলের ৫ মিটার গভীর পর্যন্ত খুঁড়তে পারবে।
১৪ মে: গ্যালিলিও স্পেস প্রোব থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। যা প্রমাণ করে বৃহস্পতি গ্রহের ইউরোপা উপগ্রহে পানি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য গ্যালিলিও স্পেস প্রোবটি ১৯৯৫ সালে উৎক্ষেপন করা হয় এবং ২০০৩ পর্যন্ত এটি কাজ অব্যাহত রাখে।
১ জুন: নাসা মঙ্গল গ্রহে একটি অতিকায় ধুলিঝড়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করে যা পরবর্তীতে মঙ্গলের পৃষ্ঠে গবেষণারত রোভারসমুহের ক্ষতিসাধন করতে পারে।২০ এ জুন তারা খবর প্রকাশ করেন যে ঝড়টি পুরো গ্রহে ছড়িয়ে পড়েছে।
২৭ জুন ২০১৮: “Oumuamua” নামের একটি মহাকাশীয় বস্তু সৌরজগৎে প্রবেশ করে।জোতির্বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন এটি কোন গ্রহাণু নয়। হতে পারে এটি মধ্যম আকৃতির একটি ধুমকেতু। অন্যদিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি হয়তো কোন এলিয়েন স্পেসশিপ।পরবর্তীতে আরও গবেষণার দ্বারা জানা যায় এটি কোন গ্রহাণু কিংবা ধুমকেতু নয়।
২ জুলাই: জোতির্বিজ্ঞানীরা PDS 70b নামক একটি সদ্য জন্ম নেওয়া গ্রহের ছবি তুলতে সমর্থ হন। এটিই কোন সদ্য জন্ম নেওয়া গ্রহের সর্বপ্রথম ছবি।
১৭ জুলাই: স্কট শেপার্ড এর নেতৃত্বে একটি বৈজ্ঞানিক দল বৃহস্পতি গ্রহের নতুন ১৭ টি উপগ্রহ আবিষ্কারের ঘোষনা দেন। এই নিয়ে গ্রহটির মোট উপগ্রহের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৯ এ।
২৭ জুলাই: একুশ শতকের সবচেয়ে দীর্ঘ পুর্ন চন্দ্রগ্রহন সংঘটিত হয়।
১৬ আগস্ট: দীর্ঘ ১৩ বছর গবেষণার পর গমের জিনোম আবিষ্কার করতে সমর্থ হন বিজ্ঞানীরা।
১৭ই সেপ্টেম্বর: TESS স্যাটেলাইটের তোলা সর্বপ্রথম ছবি মুক্তি দেয় নাসা।
২১ সেপ্টেম্বর: Ryugu গ্রহাণুতে দুটি ল্যান্ডার অবতরন করায় জাপান।
১ অক্টোবর: ক্যান্সারের নিরাময় নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণার জন্য আমেরিকার জেমস পি এলিসন এবং জাপানের তাসুকু হনযো যৌথভাবে চিকিত্সা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
৩ অক্টোবর:আমেরিকার ফ্রান্সেস এইচ আর্নল্ড, জর্জ পি স্মিথ এবং ইংল্যান্ডের গ্রগরী পি উইন্টার যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
কানাডার কিউবেকে INRS এর বিজ্ঞানীরা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম ক্যামেরা উদ্ভাবন করেন। এটি সেকেন্ডে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ফ্রেমে ছবি তুলতে পারে।
৩০ অক্টোবর: নাসার যুগান্তকারী মহাকাশ উপগ্রহ কেপলার কে মৃত ঘোষণা করা হয়।
জীবদ্দশার ১০ বছরে এটি:
১।৫৩০৫০৬ টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করে।
২।২৬৬২ টি গ্রহ আবিষ্কার করে।
৩।৬১ টি সুপারনোভা বিস্ফোরন পর্যবেক্ষণ করে।
১১ই অক্টোবর: রাশিয়ার সয়ুয-FG রকেট উৎক্ষেপনের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে বিস্ফারিত হয়। এটি দুজন মানুষ বহন করছিল। সৌভাগ্যবশত দুজন মহাকাশচারীকেই জীবন্ত উদ্ধার করা হয়।
২ নভেম্বর:ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিউরোমরফিক সুপারকম্পিউটার SpiNNaker আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়।
১৬ অক্টোবর: বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর লেখা সর্বশেষ বই Brief Answers To The Big Questions প্রকাশিত হয়।
২৪ অক্টোবর: উত্তর আমেরিকার বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত প্রাচীন অস্র, একটি তীরের ফলার সন্ধান পান। ধারনা করা হয় এটি এপর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পুরনো অস্ত্র যা তৈরি হয়েছিল প্রায় ১৩,০০০-১৫,০০০ হাজার বছর আগে।
১ নভেম্বর: Earth BioGenome Project লঞ্চ করা হয় যা দশ বছর ধরে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন প্রজাতির জিনোম নিয়ে গবেষণা করবে।
৫ নভেম্বর: জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের দ্রুত সেরে উঠার খবর প্রকাশিত হয়। যা আমাদের জন্য অবশ্যই অত্যন্ত খুশির একটি খবর যেহেতু ওজোর স্তর আমাদেরকে সুর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
২৫ নভেম্বর: চীনের বিজ্ঞানীরা দুইজন জমজ শিশুর জন্মের খবর প্রকাশ করেন যাদের জিনকে HIV ভাইরাসের প্রতিরোধ করার জন্য প্রোগ্রাম করা হয়েছে। উল্লেখ্য HIV ভাইরাস প্রানঘাতি এইডস রোগের জন্য দায়ী।
২৬ নভেম্বর: নাসার InSight ল্যান্ডার সফলভাবে মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরন করে।মঙ্গল নিয়ে গবেষণায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে এই প্রোবটি।
৮ ডিসেম্বর: চীন তাদের Change 4 স্পেস মিশন লঞ্চ করে। এটি চাঁদের অন্ধকার পৃষ্ঠে রোভার ল্যান্ড করাবে। ২০১৯ এর শুরুতে রোবটটি চাঁদে সফলভাবে ল্যান্ড করে চায়নাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায় যেহেতু এর আগে কেউই এ কাজটি করতে পারেনি।
১০ ডিসেম্বর: ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ২ সৌরজগতের সীমানা পেরিয়ে যায়। এর ছয় বছর আগে ভয়েজার-১ প্রোবটি সৌরজগতের বাইরে পা রাখে।
২০১৮ এ নাসা পার্কার সোলার প্রোপ উৎক্ষেপন করে যা সুর্যের অত্যন্ত কাছ দিয়ে প্রদক্ষিন করে বিজ্ঞানীদের সুর্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে।