Bangla Health Tips: সত্যি বলতে চুল পড়া খুবই সাধারণ একটি সমস্য। প্রতিদিন পঞ্চাশ-ষাট টি চুল পড়া স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কিন্তু যখন চুল পড়া মাত্রাতিরক্ত হয়ে যায় তখন সেটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে চুল, যখন সেই সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ চুল পড়া শুরু হয় তখন অনেকেরই সেটা মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
চুল পড়া রোধ করার কিছু উপায় আছে যা সত্যিই খুবই কার্যকরী। তবে এই উপায়গুলো থেকে ভালো ফল পেতে হলে অবশ্যই ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। নিম্নে বর্ণিত উপায়গুলো অনুসরণ করলে চুল পড়া রোধই হবেনা বরং আপনি পাবেন সুন্দর, সিল্কি, স্বাস্থ্যবান চুল।
আমলকি: চুল পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘ভিটামিন সি’ এর অভাব। আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। যা কিনা চুলপড়া বন্ধ ও চুলের খুশকি দূর করে। আমলকির রস নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ার লাগালে শুধু চুল পড়া রোধই হয় না চুল আগের চেয়েও হয় আরও বেশি স্বাস্থ্যবান।
সালফার: পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, যা কিনা চুল পড়া রোধের পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। যেভাবে ব্যাবহার করবেন, একটি পেঁয়াজ প্রথমে বেটে নিবেন। তারপর সেই বাটা অংশ নারিকেল তেলে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিবেন। মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে মাথার ত্বক ও চুলে ঘন্টা খানেক লাগিয়ে রাখার পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার করে নিয়মিত ব্যাবহার করলে চুল পড়া অনেকাংশেই রোধ হবে।
নিমপাতা: নিমপাতাকে বলা হয় সকল রোগের মহাঔষধ। নিম পাতায় রয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস রোধী উপাদান যা খুশকি দূর করে, চুলপড়া রোধ করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। নিম পাতা গরম পানিতে দিয়ে পেস্ট করে চুলে লাগানোর ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। দুই সপ্তাহের মধ্যেই দেখবেন আপনার চুল পড়া অনেকাংশে কমে যাবে।
ওমেগা-থ্রি: ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড চুল পড়া রোধে খুবই কার্যকরী। সাধারণত বিশেষ ধরনের মাছে এই উপাদানটি থাকে। তবে আমাদের দেশে এসব স্যামন, ম্যাকারেল মাছ পাওয়া যায় না। তবে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড তিসির তেলে পাওয়া যায়। আর এই তেল পাবেন স্থানীয় বাজারেই। মনে রাখবেন, এই তিসির তেল কিন্তু মাথায় লাগানোর জন্য নয় অথবা রান্নায় ব্যবহার করার জন্যও নয়। প্রতিদিন ২ চা চামচ তিসির তেল সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। তাহলেই আপনার চুল পড়া অনেক কমে আসতে পারে।
ভিটামিন-ই: চুল পড়া রোধে ও নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রে ভিটামিন-ই খুবই কার্যকরী। ভিটামিন-ই চুলের ত্বকে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয় যা চুল বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে এটি চুল পড়া রোধ করে। ভিটামিন-ই এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেল অপসারণের মাধ্যমে স্কিনকে সুরক্ষিত রাখে। নাশপাতি, বাদাম ও জলপাই তেলে প্রচুর ভিটামিন-ই থাকে।
মেহেদি পাতা: প্রাকৃতিকভাবে চুল রঙ ও চুলকে কন্ডিশণ করার পাশাপাশি মেহেদি পাতা ব্যাবহার করে চুল পড়া রোধ করাও সম্ভব। যেভাবে ব্যাবহার করবেন, ২৫০ মিলি সরিষার তেল নিন একটি টিনের কৌটায়। এবার এতে ৬০ গ্রাম পরিষ্কার মেহেদি পাতা দিয়ে চুলোয় ফুটিয়ে নিন যতক্ষণ না পাতাগুলি পুড়ে যায়। এবার মিশ্রণটি একটি মসলিন কাপড়ে ছেকে নিয়ে শুধু তেলটি সংগ্রহ করে নিন। এবার এক কাপ শুকনো মেহেদি পাতার গুড়োর সাথে আধা কাপ দই মিশিয়ে নিন ভালো করে। মিশ্রণটি ঘণ্টাখানেক চুলে লাগিয়ে রাখুন তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার করে নিয়মিত ব্যাবহার করবেন।
ক্যাস্টর অয়েল: চুল পড়া সমস্যার সমাধানের জন্য যে সমাধানটি সবচাইতে বেশী কার্যকর তা হচ্ছে ক্যাস্টর অয়েল। বিভিন্ন উপায়ে এই ক্যাস্টর অয়েল চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারলে চুল পড়ার সমস্যা একেবারেই নিরাময় করতে পারবেন। শুধু তাই নয় নতুন করে চুল গজাতেও সাহায্য করবে ক্যাস্টর অয়েল। আর সেই সাথে চুল ও মাথার ত্বকের নানা সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন চিরকালের জন্য।
- শুধুমাত্র ক্যাস্টর অয়েল হাতে তালুতে নিয়ে চুলের গোঁড়ায়, মাথার ত্বক থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত ভালো করে ম্যাসেজ করার অভ্যাস অনেকটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
- তবে লক্ষ্য রাখবেন অতিরিক্ত তেল ব্যবহার যাতে না করা হয়। কারণ ক্যাস্টর অয়েল অন্যান্য তেলের তুলনায় অনেক বেশী ঘন থাকে যা ধুয়ে ফেলতে কষ্ট হবে।
- সব চাইতে ভালো ফলাফল পাবেন যদি পুরোরাত ক্যাস্টর অয়েল চুলে রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে পারলে। কিন্তু যদি হাতে সময় না থাকে তাহলে ১৫-২০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন ক্যাস্টর অয়েল।
- আপনি শুধু ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে না চাইলে এতে অন্যান্য তেল যেমন অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল, ভিটামিন ই ক্যাপস্যুল ইত্যাদি মিশিয়ে নিতে পারেন। এতেও বেশ ভালো ফলাফল পাবেন।
- প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারলে খুবই ভালো ফলাফল পাবেন। কিন্তু যদি হাতে সময় না থাকে তাহলে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
পরিশেষে, আপনার চুল পড়া যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আজই এন্টি ডেন্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যাবহার বন্ধ করুন, এবং প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না।