-

হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয় – Bangla Health Tips

Bangla Health Tips: করনারি আর্টারি নামে একটি ধমনি আছে সেই ধমনির মাধ্যমেই হার্টে রক্ত সঞ্চালিত হয়। মানুষ যখন পূর্ণ বয়স্ক হয়, এই করনারি আর্টারিগুলোর ভিতর চর্বি জাতীয় একটি প্রলেপের মতো পড়ে এগুলো বন্ধ করে দেয়। আর তখনই ঠিক হৃদরোগের উদ্ভব হয়। হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল সে ব্যাপারে আমরা সবাই জানি। এ রোগে একবার আক্রান্ত হলে সারাজীবন এ মারাত্মক ব্যাধি লালন করতে হয়। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব।

হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ: হৃদরোগের জন্য অনেক কারন দায়ী। যেমন- বয়স, লিঙ্গ, ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, স্বল্প শারীরিক পরিশ্রম, খাবার দাবারে অসচেতনতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন, নিয়মিত হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম, খাবার দাবারে একটু সচেতন হলে এবং ঊচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস করা যেতে পারে।

যাদের হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি: প্রজননে সক্ষম নারীর তুলনায় পুরুষদের হৃদরোগ হবার ঝুঁকি বেশি। প্রজননের সময়ের পরে, নারী ও পুরুষের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা সমান। যদি কোন নারীর ডায়াবেটিস থাকে, তার হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষের চেয়ে বেশি। মধ্যবয়সী মানুষের ক্ষেত্রে, করোনারি হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা নারীদের তুলনায় পুরুষদের প্রায় ৫ গুণ বেশি। হৃদরোগে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ মূলত হরমোনগত পার্থক্য।

যে বয়সে হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি: হৃদরোগ সব বয়সেই হতে পারে। তবে সাধারনত বয়স্ক ব্যক্তিরাই এ রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারনভাবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। ৬০ বছরের বেশি বয়সী হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮২ শতাংশই হৃদরোগে মারা যায়। আবার ৫৫ বছর বয়সের পরে স্ট্রোক করার সম্ভাবনাও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আবার বয়সের সাথে সাথে ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়, ফলে করোনারি ধমনী রোগ হয়।

হৃদরোগের লক্ষণসমূহ:

  • সাধারণত কানের লতি সমতল হয়ে থাকে যদি কানের লতিতে ভাঁজ পড়ে তাহলে আপনি হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন।
  • চোখের আইরিশের বাইরের প্রান্তে ধূসর, সাদা বা হলুদ অর্ধচক্র বা বৃত্তাকার বলয় থাকলে বুঝতে হবে আপনার রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, যা হৃদরোগের চিহ্ন।
  • হাতের নখের আকার পরিবর্তন হয়েছে বা অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়েছে তাহলে বুঝতে হবে হার্টের অবস্থা ভালো নয়। নখ যখন চামড়ার থেকে বেশি বেড়ে গিয়ে বেঁকে যায় তখন তাকে ক্লাবিং বলে। আর এরকম হওয়ার কারণ হলো হার্ট থেকে পর্যাপ্ত রক্ত আঙুলের নখে পৌঁছতে পারছে না।
  • দাঁতের অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থা এবং মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ায় রক্তপ্রবাহে ৭০০ বেশি বিভিন্ন জীবাণু প্রবেশ করে। আর এর কারণে কেউ সুস্থ বা ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হলেও তার হৃদরোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৩৯টি দেশের ১৫ হাজার ৮২৮ জনের ওপর গবেষণাটি চালিয়ে এ কথা জানান।
  • এছাড়াও বুক, পিঠ, পেট, গলা, বাম বাহুতে ব্যাথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভুত হতে পারে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়:

  • বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাদ্য বর্জন করতে হবে।
  • অতিরিক্ত চা-কফি, ফাস্টফুড টিনজাত ও শুকনো খাবার, কোমলপানীয় বর্জন করতে হবে।
  • মদ্যপান, সাদা জর্দা, তামাক, ধূমপান বন্ধ করতে হবে (ধূূূমপান ছাড়ার ১০ বছর পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যায়)।
  • মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, কায়ীক পরিশ্রম কম করাও হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। হৃদরোগ বংশগতও হয়।
  • অনিদ্রা, টেনশন, ভয়, ক্রোধ, শোক, হতাশা, রাগ, প্রতিশোধ প্রবণতা, হিংসা বিদ্বেষ, অশান্তি, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় বা চেচাঁমিচি (চিৎকার), অস্থিরতা, ক্ষমা করতে না পারা- এসব মানসিক চাপ বর্জনীয়।
  • উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত রাখা (সপ্তাহে এক দিন রক্তচাপ পরীক্ষা, মাসে একবার করে রক্তের সুগার দেখা, তিন মাস পর পর লিপিড প্রফাইল ও ছয় মাস পরপর ইসিজি ও বছরে একবার করে ইটিটি করা উচিত- নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পরও)।

জন্মগত হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়:

  • গর্ভবতী মায়েদের ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • গর্ভবতী মায়ের উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে।
  • গর্ভবতীর কোনো রকম ওষুধ খাওয়ার আগে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নিতে হবে।
  • তিন মাস পর্যন্ত গর্ভবতী মায়ের কোনো ধরনের এক্স-রে অথবা রেডিয়েশন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
  • গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকলে অন্তত তিন মাস আগে মাকে MMR ইনজেকশন দেয়া আবশ্যক, যেন ‘রুবেল্লা জার্মান মিজেলস’ রোগ না হয়।

পরিশেষে, দাম্পত্য সুখী সম্পর্ক, সামাজিক সুস্থ সম্পর্ক, ধর্মকর্ম, ধূমপান বর্জন ও ধ্যান হৃদরোগ প্রতিরোধ সহায়ক।

আরও পড়ুন:
[mks_icon icon=”fa-play” color=”#dd3333″ type=”fa”]গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সহজ সমাধান – Bangla Health Tips
[mks_icon icon=”fa-play” color=”#dd3333″ type=”fa”]নাক ডাকা থেকে চিরমুক্তি – Bangla Health Tips

সর্বশেষ প্রকাশিত