চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে একটি চক্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিরাইমপুর গ্রাম থেকে শওকতসহ ওই চক্রের চার সদস্যকে র্যাব আটকের পর বের হয়ে আসে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বোর্ডের ওয়েবসাইট হ্যাকড করে ফলাফল পরিবর্তনের জালিয়াতির এ তথ্য। শওকত ওই গ্রামের মকবুল আলীর ছেলে।
বুধবার শহরতলীর মেজরটিলাস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল আলী হায়দার আজাদ আহমদ।
র্যাবের অভিযানে শওকত ছাড়াও ওই চক্রের যারা আটক হয়েছে তারা হলেন- শওকতের বড় ভাই সৌরভ হোসেন (২১), শ্রীমঙ্গলের শ্যামলী আবাসিক এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে আবদুল কাদির (১৭) ও মুসলিমপাড়ার কুদ্দুস মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (১৭)।
র্যাব জানায়, গেলো এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তন করে দেয়ার নাম করে সে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা। শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট হ্যাকড করে ২৫ হাজার টাকার চুক্তিতে সে যে কোন শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন করিয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পাইয়ে দিত। সারাদেশে এ কাজ করার জন্য সে ইতোমধ্যে গড়ে তুলেছে নেটওয়ার্ক।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে ওই চক্রের মূল হোতা হচ্ছে শওকত। প্রযুক্তিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতো। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো, ভাইবারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র বিক্রি করতো। প্রশ্নপত্র বিক্রিতে তাকে সাহায্য করতো বড় ভাই সৌরভ। গত এসএসসি পরীক্ষার সময় শওকত বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করে। তার কাছ থেকে প্রশ্নপত্র কিনে পরীক্ষা দেয় র্যাবের হাতে আটক আবদুল কাদির ও হৃদয় মিয়া। পরীক্ষার প্রশ্নের সাথে শওকতের দেয়া প্রশ্ন হুবহু মিলে যাওয়ায় তারাও যুক্ত হয় এই চক্রের সাথে। চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস না হওয়ায় তারা ভ‚য়া প্রশ্নপত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়াও শওকত বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট হ্যাক করে ফলাফল পরিবর্তন করে দেয়ার প্রতিশ্রতি দিতো। এ কাজে তাকে সাহায্য করতো তার বড় ভাই সৌরভ ও চক্রের অন্য সদস্যরা। গোল্ডেন এ প্লাসের জন্য তারা ২৫ হাজার টাকা, সাধারণ এ প্লাসের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা এবং এর নিচের ফলাফলের জন্য ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতো। শিক্ষাবোর্ড ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটও সে হ্যাকড করে অর্থ আদায় করতো বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে শওকত।
ওই চক্রের আর কোন সদস্য কোথাও আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখছে র্যাব।