নতুন বছরে অনেকেই ব্যবসা শুরু করার জন্য ইউনিক ব্যবসা আইডিয়া খুজে থাকে। বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিটি ব্যবসাতেই ব্যাপক প্রতিযোগিতা রয়েছে। কিন্তু ইউনিক কিছু ব্যবসা আইডিয়া বাছাই করতে পারলে, এই প্রতিযোগিতা এড়িয়ে দ্রুতই ব্যবসাতে সাফল্য অর্জন সম্ভব।
আপনার পুজির পরিমান যেমনই হোক না কেন, এবং আপনি যেই ধরনের ব্যবসায়ই করতে চান না কেন, সেই ব্যবসা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং পরিকল্পনা করা জরুরী। তাই উদ্যোক্তা ভাইদের জন্য এই আর্টিকেলে কয়েকটি ইউনিক লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১০টি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া
(১) টিস্যু ব্যাগ তৈরির ব্যবসা
পলিথিনের ব্যবহারের কারণে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এবং পরিবেশ দূষণ হচ্ছে সর্বত্রই। তাই বিশ্ববাসী এখন পলিথিনের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে চায়। প্রাণিজগতের হুমকি এই পলিথিন ব্যবহারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা এখনো সম্ভব হয়নি। তাই পলিথিনের বিকল্প হিসেবে টিস্যু ব্যাগের প্রচলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভবিষ্যতে এর প্রচলন ও চাহিদা আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে টিস্যুর ব্যাগ কিংবা অন্যান্য উপাদানের ব্যাগের প্রচলন করতে হবে। তাই ক্ষুদ্র পরিসরে আমরা চাইলেই টিস্যু ব্যাগ তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারি। ইন্টারনেটে একটু ঘাটাঘাটি করলে অথবা যারা এই ব্যবসাটি করছে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে, কিভাবে ব্যবসা শুরু করা যায় সে সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন।
(২) জ্যাম-জেলি তৈরির ব্যবসা
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই এমনকি প্রায় প্রতিটি দোকানেই জ্যাম-জেলি পাওয়া যায়। আর এই ধরনের খাবার আইটেমের চাহিদাও রয়েছে অনেক। ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরনের জ্যাম কিংবা জেলি তৈরি ও বাজারজাতকরন করে ব্যবসা শুরু করা যায়।
প্রাথমিকভাবে এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য মাত্র ২৫-৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করাই যথেষ্ট হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ইন্টারনেট থেকে দেখে দেখে চুলায় জেলি তৈরি করে সে গুলোকে কাচের বৈয়ামে ভর্তি করে বিক্রি করা যাবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরেই ঘরোয়া পরিবেশে তৈরি করে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। পরবর্তীতে আপনি চাইলে ধীরে ধীরে সেমি-অটোমেটিক অথবা অটোমেটিক মেশিন দিয়ে এগুলো তৈরি করার জন্য ধাপে ধাপে ব্যবসাটি সম্প্রসারন করতে পারবেন।
(৩) ন্যাপথলিন তৈরির ব্যবসা
বাংলাদেশে এই পণ্যটির ভালো বাজারচাহিদা রয়েছে। প্রায় প্রতিটি কসমেটিকস এর দোকানেই ন্যাপথলিন এর চাহিদা রয়েছে। জামা কাপড়ে এবং টয়লেটে পোকামাকড়ের আক্রমণ এড়ানোর জন্য এই পন্যটি ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় মশা তাড়ানোর জন্যও এটি ভালোভাবে কাজ করে।
মূলত ন্যাপথলিন তৈরির মেশিনের সাহায্যে এই পণ্যের ছোট ছোট বল তৈরি করতে হয়। আপনি খুব সহজেই বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে এই পণ্য তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। একবার এটি তৈরীর প্রক্রিয়া শিখে অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগ করেই আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।
(৪) কালোজিরার তেল তৈরির ব্যবসা
বাংলাদেশে কালোজিরার তেলের অনেক চাহিদা রয়েছে। কারণ কালোজিরার তেল মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম – বহু বছর আগেই বলে গিয়েছেন কালোজিরার ঔষধি গুনাগুণের কথা।
আপনি চাইলে এই কালোজিরার তেল তৈরি করেই কিন্তু সুন্দর একটি টঞট্রব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন। আপনার আশেপাশের এলাকার যতগুলো ফার্মেসি রয়েছে সেই ফার্মেসি গুলোকে টার্গেট করে এই ব্যবসা শুরু করা যাবে। আপনার আশেপাশের ৫০০ টি ফার্মেসির মধ্য থেকে যদি ৩০০ টি ফার্মেসি যদি আপনার কাছ থেকে এই পণ্য নিয়ে বিক্রি করে তাহলেই ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য তা যথেষ্ট হবে।
(৫) মধু উৎপাদনের ব্যবসা
বাংলাদেশে মধু উৎপাদন ব্যবসাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মধু উৎপাদনের জন্য আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মধু উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু টাকা বিনিয়োগ করে এই ব্যবসাটি শুরু করা যেতে পারে। প্রকৃতি নির্ভর এই ব্যবসাটিতে অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগ করলেই এখান থেকে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
এই ব্যবসাতে আপনার প্রধান পুঁজি হবে নিজের অভিজ্ঞতা। আপনার অভিজ্ঞতা যত বৃদ্ধি পাবে ততই আপনি এই ব্যবসায় এগিয়ে যেতে সক্ষম হবেন। হানি কাল্টিভেশন ট্রেনিং সেন্টার ইন বাংলাদেশ লিখে ইন্টারনেটে সার্চ করলেই আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।
(৬) খেলনা তৈরির ব্যবসা

বাংলাদেশে একটি বিশাল সম্ভাবনাময় ব্যবসার খাত হচ্ছে বাচ্চাদের জন্য খেলনা তৈরি করা। আপনি খেয়াল করবেন ছোট ছোট খেলনা গুলো এতটাই বেশি দামে বিক্রি হয়, যা অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে প্রায় অকল্পনীয়। ক্ষুদ্র পরিসরেই এই ধরনের ব্যবসা শুরু করা যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে কাপড়ের তৈরি টেডি বিয়ার বা এজাতীয় খেলনা তৈরি করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কারণ এসকল উপাদান কম বুঝে নিয়েই উৎপাদন করা যায়। এর থেকে আরেকটু ভালো পণ্যের ব্যবসা করতে চাইলে, সেমি অটোমেটিক অথবা অটোমেটিক মেশিনের সাহায্যে ও বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি করে ব্যবসা করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে বিদেশ থেকে মেশিন আমদানি করে আনতে হবে। এক্ষেত্রে একটু বেশি ইনভেস্ট করতে হতে পারে।
(৭) চানাচুর এবং নিমকি তৈরির ব্যবসা
চানাচুর এবং নিমকি আগেও ছিল এবং বর্তমানেও রয়েছে। এটি প্রায় সবসময়ই একটি চাহিদা সম্পন্ন ও সম্ভাবনামায় ব্যবসা হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এধরনের পণ্য নিয়ে একটি ভালো মানের একটা ব্যবসা দাঁড় করানো সম্ভব।
আপনি কয়েকবার দেখলেই খুব সহজে চানাচুর এবং নিমকি তৈরির পদ্ধতি জেনে/শিখে নিতে পারবেন। চানাচুর বানানো শেখা হয়ে গেলে, বাড়িতে বসেই এগুলো তৈরি করবেন এবং প্যাকেটজাত করবেন। তারপর আশেপাশের প্রতিটি এলাকাতেই প্রচুর মুদি দোকান রয়েছে, সেখানে সাপ্লাই করে মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। অথবা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে নির্দিষ্ট হাটের দিনে নিজেই বিক্রি করতে পারবেন বাড়তি দামে।
চানাচুর এর পাশাপাশি নিমকি, ডালভাজা, বাদাম ভাজা ইত্যাদিও তৈরি করা যায়। এটি অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা।
(৮) অ্যালুমিনিয়ামের অথবা স্টিলের দরজা জানালা তৈরি
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের মাঝে এখন দালানকোঠারর প্রতি আকর্ষণ অনেক বেশি। গ্রাম কিংবা শহর সব জায়গাতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। অনেকেই পুরোনো বাড়িটাকে নতুন করে সাজানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নতুন বাড়ি ঘর তৈরি এমন কি অফিস-আদালতে অ্যালুমিনিয়ামের, স্টিলের, লোহার দরজা জানালার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তাই নতুনভাবে শুরু করতে চাইলে অ্যালুমিনিয়ামের অথবা স্টিলের দরজা জানালা তৈরির ব্যবসাটি আপনার জন্য অনেকটা লাভজনক হবে। যদিও এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য একটু বেশি পুঁজির প্রয়োজন হবে। কিন্তু ব্যবসাটি শুরু করতে পারলে ভালো ইনকাম করা সম্ভব।
(৯) পনির, মাখন ও ঘি তৈরীর ব্যবসা
বাড়িতে বসে খুব সহজে পনির, মাখন এবং ঘি বানানো যায়৷ নামমাত্র বিনিয়োগ করেই এই ব্যবসাটি আপনি শুরু করতে পারবেন। বর্তমান বাজারে হাতে তৈরি ঘি, মাখন এবং ছানার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে৷ আপনি একবার এই উপাদানগুলো তৈরি করে বাজারজাত করলেই এর চাহিদা বুঝতে পারবেন।
বড় বড় কোম্পানির পন্যগুলোর চেয়ে বাড়িতে তৈরি পণ্যগুলোর মান অনেক ভালো ও নিরাপদ হয়। তাই বলেই মানুষ হাতে তৈরি উপাদানগুলো কিনতে আগ্রহী হয়৷ একবার ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে পারলে বারবারই তারা আপনার কাছে ফিরে আসবে। এভাবে অল্প কিছু কাস্টমারকে নিয়মিত সার্ভিস প্রদান করতে পারলেই আপনার ব্যবসার জন্য যথেষ্ট হবে।
(১০) রাবারের কার্পেট, পাপোশ, টেবিল ক্লথ তৈরি
রাবারের তৈরি কার্পেট অথবা পাপোশ এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অফিসে অথবা বাড়িতে, সব জায়গাতেই এই পণ্যের চাহিদা রয়েছে। ভালো মানের এবং ভালো ডিজাইনের পণ্য তৈরি করতে পারলে বিক্রি করাও খুবই সহজ হবে৷
এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য আপনাকে কিছু সাধারন ট্রেনিং নিতে হবে এবং পণ্য তৈরীর জন্য কিছু যন্ত্রপাতি কিনে নিতে হবে। তবে এটি একটি মধ্যম পরিমান পুজির ব্যবসা। তাই এই ধরনের ব্যবসাতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩-৪ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
শেষকথা
উপরোক্ত আর্টিকেল থেকে বর্তমান সময়ের জন্য বাছাই করা কয়েকটি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জানতে পারলেন। তবে এখান থেকে কোন ব্যবসা শুরু করতে চাইলে, প্রথমে দীর্ঘদিন সেই ব্যবসার যাবতীয় বিষয়বস্ত পর্যবেক্ষন করে নিবেন। তা নাহলে ব্যবসাতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।