Facebook বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আজকাল এমন লোক খুজে পাওয়া খুবই দুষ্কর যার একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। অনেকেই ইন্টারনেট বলতে শুধু ফেসবুকই বুঝে থাকে। ফেসবুকের বিশালতায় হারিয়ে গিয়ে ইন্টারনেট জগতটা যে আরো কত বিশাল তা যেন বুঝতেই পারেনা। যদিও বর্তমানে ফেসবুকের মতো আরো অনেক অনলাইন ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে তাও ফেসবুকের আধুনিক ফিচার এবং নির্ভরযোগ্যতার কাছে অন্য সাইটগুলো খুবই তুচ্ছ। তাইতো বর্তমানে বিশ্বের প্রায় দুইশ কোটির মতো লোক ফেসবুক ব্যাবহার করে।
ফেসবুক সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে কিছু দ্রুত তথ্য জেনে নেই-
১। ২০১৭ এর শেষের দিকের তথ্যমতে ফেসবুকে প্রায় দুইশ কোটি সক্রিয় ব্যাবহারকারি রয়েছে। ২০১২ সালে এর ব্যাবহারকারী ছিল একশ কোটির মতো। (সক্রিয় ব্যাবহারকারী হলো সর্বশেষ এক মাসের মধ্যে ফেসবুকে লগিন করেছেন)
২।বর্তমানে ফেসবুক বিশ্বের ১৪০টি ভাষায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
৩।ফেসবুকের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বর ২০১৭ তে ফেসবুকে কাজ করা মোট কর্মকর্তা পঁচিশ হাজারের মতো।
ইতিহাস
ফেসবুকের আবিষ্কর্তার নাম আমরা সবাই জানি। তিনি হলেন মার্ক জাকারবার্গ। কিন্তু তিনিই ফেসবুকের একমাত্র আবিষ্কর্তা নন। ২০০৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বর্ষে থাকাকালীন জাকারবার্গ “ফেসম্যাশ” নামে একটি পোগ্রাম লিখেছিলেন। কিছুদিন পর হার্ভার্ড কতৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগ এনে এটি বন্ধ করে দেন। যদিও অভিযোগগুলি শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হয়নি। কিছুদিন পর জাকারবার্গ এটিকে একটি সামাজিক শিক্ষা মাধ্যমে রুপ দেন। যেখানে বিভিন্ন ধরনের নোট সজ্জিত ছিল এবং প্রত্যেকটি নোটে কমেন্ট করার মাধ্যম ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই এটি হার্ভার্ডের ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০০৪ এ জাকারবার্গ এবং তার চার বন্ধু মিলে TheFacebook নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি শুরু করেন। ৪ই ফেব্রুয়ারি ২০০৪ এ thefacebook.com যাত্রা শুরু করে। যাত্রার শুরুর দিকে শুধুমাত্র হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই ফেসবুক ব্যাবহার করতে পারতো। কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যেই এর জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায় এবং আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ফেসবুক ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৫ এ ফেসবুকের ওয়েবসাইটের নাম থেকে the শব্দটা কেটে দিয়ে শুধুমাত্র facebook.com রাখা হয়।
ধাপে ধাপে ফেসবুকের ইতিহাস:-
- ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০০৪। ফেসবুকের যাত্রা শুরু thefacebook.com নামে। এসময় শুধুমাত্র লেখা এবং কোনো ব্যাক্তির প্রোফাইলে কিছু বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার ব্যাবস্থা ছিল।
- অক্টোবর ২০০৫ ফেসবুকে ছবি আপলোড এবং শেয়ার সিস্টেম চালু হয়।
- এপ্রিল ২০০৬ মোবাইলের জন্য ফেসবুক চালু হয়। তের বছরের উপরে যেকোনো কারোর জন্য ফেসবুক উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
- ৬ই সেপ্টেম্বর ২০০৬ এ ফেসবুকে নিউজ ফিড চালু হয়।
- এপ্রিল ২০০৭ ফেসবুক চ্যাট(মেসেজিং)চালু হয়। মাইক্রোসফটের MSN Messenger কে টেক্কা দেয়। শেষমেশ MSN Messenger বিলুপ্ত হয়।
- ২০০৮ এ ফেসবুক তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী MySpace কে ওভারটেক করতে সক্ষম হয়।
- ২০০৯: ২০০৮ এর শেষের দিকে ফেসবুকের মোট ব্যাবহারকারী ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। ২০০৯ এর শেষ দিকে এর টোটাল ইউসার সংখ্যা ৩৫০ মিলিয়ন।
- ফেব্রুয়ারি ২০০৯: ফেসবুকে লাইক বাটন চালু হয়। ফেব্রুয়ারি ২০১৬ এ অন্যান্য রিয়েক্ট বাটন চালু হয়।
- জুলাই ২০১০: ফেসবুকের মোট ব্যাবহারকারী ৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। কম্পিউটার এবং মোবাইল ভার্শনে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকে।ব্যাবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তার দিকে জোর দিতে থাকে ফেসবুক কতৃপক্ষ।
- জানুয়ারি ২০১১: ফেসবুকের মার্কেট ভ্যালু ৫০ বিলিয়ন ডলারে পরিনত হয়। ডেভিড ফিন্চার কতৃক The Social Network নামে একটি ফিল্ম তৈরি হয়। ফিল্মটির মুল উপজীব্য ছিল ফেসবুকের ইতিহাস।
- ২৯ জুলাই ২০১১ তে ফেসবুক তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে একটি অভিনব পদ্ধতি চালু করে। এদিন তারা বাগ বাউন্টি প্রোগ্রাম(Bug Bounty Program) চালু করে যার মুল উদ্দেশ্য হলো যারা ফেসবুকের সিকিউরিটি সিস্টেমে কোনো ভুল ধরিয়ে দিতে পারবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে।
- ২০১২ তে ফেসবুকের মোট ব্যাবহারকারী দাড়ায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটিতে!! ফেসবুক বর্তমানে বিশ্বে ১ নম্বর ফটো শেয়ারিং অ্যাপ ইন্স্টাগ্রামকে কিনে নেয় মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে।
- ২০১৩ তে ফেসবুক internet.org নামে একটি বিনামূল্যের ওয়েবসাইট লঞ্চ করে যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়া এবং মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা।জুন ১২ ২০১৩তে ফেসবুকে টুইটারের মতো হ্যাশট্যাগ চালু হয়।
- ফেব্রুয়ারি ২০১৪: ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপকে কিনে নেয়। হোয়াটসঅ্যাপের নির্মাতা ছিলেন দুজন প্রাক্তন Yahoo কর্মকর্তা। ১৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪ বিলিয়ন তাদেরকে দেওয়া হয় এবং বাকি ১২ বিলিয়ন ফেসবুকের শেয়ারে অন্তর্ভুক্ত হয়।
- ২০১৬ তে প্রথমবারের মতো ফেসবুক লাইভ(Live)ফিচারটি চালু হয়। লাইভে আসা প্রথম ব্যাক্তিটি হলেন জাকারবার্গ নিজে।
- ২০১৭ এর মাঝামাঝি সময়ে ফেসবুক দুইশ কোটি সক্রিয় ব্যাবহারকারীর মাইলফলক অতিক্রম করে।
সমালোচনা এবং বিতর্ক: সামাজিক যোগাযোগ এবং বিনোদনে প্রচুর ভুমিকা রাখলেও এপর্যন্ত অনেকবারই সমালোচনা এবং বিতর্কের স্বীকার হয়েছে। বিশেষ করে কোটি কোটি ব্যাবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায়ই বেগ পেতে হয় ফেসবুককে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী যোগাযোগ এবং প্রতিহিংসা ছড়াতে ফেসবুকের সাহায্য নিয়েছে। যেহেতু ফেসবুকে ১৩ বছরের উপরে সবাইই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে বেশি স্পেসিফিক তথ্যের প্রয়োজন পড়ে না তাই কোনো ব্যাক্তি সহজেই ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এপর্যন্ত অনেকবারই এসব সমস্যার জন্য বিভিন্ন দেশে ফেসবুক বন্ধ করতে হয়েছিলো। এমনকি এসব দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। সম্প্রতি কেমব্রিজ অ্যানালিটিক নামের একটি ওয়েবসাইটের কাছে ফেসবুকের তথ্য বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। যেই তথ্যগুলোর আমেরিকার প্রেসিডেনট নির্বাচনের সাথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে। শেষমেশ মার্ক জাকারবার্গ এটি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন এবং এজন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের ভুয়া খবর এবং বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য বিশ্বজুড়ে সমালোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ, ইরান, মিশর, চীন, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ভারত, ইসরায়েল, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মরক্কো, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, শ্রি-লংকা, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে ফেসবুক সাময়িক সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ছিল।
ফেসবুক সম্পর্কে আরো কিছু অজানা তথ্য:-
আমরা সবাইই হয়তো খেয়াল করেছি যে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি যেই রংটির আধিপত্য তা হলো নীল রঙ। এর পিছনে একটি কারন রয়েছে। সেটি হলো মার্ক জাকারবার্গ নিজে বর্নান্ধ, অন্যান্য সব রঙের তুলনায় তিনি নীল রঙ সবচেয়ে ভালো দেখতে পারেন যার কারনে ফেসবুকে নীল রঙের এত ছড়াছড়ি। এপর্যন্ত ফেসবুকের ডাটা সেন্টারগুলোতে রাখা তথ্যের পরিমাণ কত জানে?? প্রায় ৩০০ পেটাবাইট। এক পেটাবাইট সমান এক মিলিয়ন গিগাবাইট!!
বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে ফেসবুকে নতুন আটজন ব্যাবহারকারী যুক্ত হচ্ছেন!! অর্থাত্ প্রতি মিনিটে ৪৮০জন। ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি শেয়ার হওয়া কন্টেন্ট হলো ভিডিও। ফেসবুকে মার্ক জাকারবার্গের শেয়ারের পরিমাণ হলো মোট শেয়ারের মাত্র ২৮% আর তা দিয়েই তিনি বিশ্বের পাঁচ নম্বর সেরা ধনী!