-

সকলের প্রিয় ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল

Dr Muhammed Zafar Iqbal
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা লেখক ও জনপ্রিয় শিক্ষক ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার। বিশেষত বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ সমাজের কাছে প্রচণ্ড জনপ্রিয় এই মানুষটি বাংলাদেশে সায়েন্স ফিকশন লেখা ও জনপ্রিয়করণের পথিকৃত।

তবে জাফর ইকবাল স্যারকে আমরা সবচেয়ে বেশী চিনি সম্ভবত শিশু-কিশোরদের জন্য তাঁর পাঠকপ্রিয় গল্প এবং উপন্যাসগুলোর জন্য। জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ এই মানুষটি পড়াশোনা করেছেন পদার্থবিজ্ঞানে। শিক্ষাগত দিক দিয়ে পদার্থবিদ হলেও তিনি বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জাফর ইকবালের পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তার জন্ম সিলেটে, ২৩শে ডিসেম্বর, ১৯৫২ খিস্ট্রাব্দে। তাঁর পিতা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। জাফর ইকবাল ১৯৬৮ সালে বগুড়া জেলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। তাঁর বিষয় ছিল – ‘Parity violation in Hydrogen Atom’। সেখানে পিএইচডি করার পর ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনিস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অর্থাৎ বিখ্যাত ক্যালটেক থেকে তাঁর ডক্টরেট-উত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন। ১৯৮৮তে তিনি বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর) এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন। ওই বছরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।

তাঁর প্রথম সায়েন্স-ফিকশন গল্প ‘কপোট্রনিক ভালোবাসা’ এবং প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ’ বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে নতুন যুগের সূচনা করে। তাঁর উল্লেখযোগ্য সায়েন্স ফিকশনের মধ্যে রয়েছে: ‘ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম’,’সেরিনা’, ‘বিজ্ঞানী সফদর আলীর মহা মহা আবিস্কার’, ‘ওমিক্রমিক রূপান্তর’, ‘টুকুনজিল’,’কেপলার টুটুবি’, ‘নি:সঙ্গ গ্রহচারী’, ‘ক্রোমিয়াম অরণ্য’, ‘ত্রিনিত্রি রাশিমালা’, ‘নয় নয় শূন্য তিন’, ‘সায়রা সায়েন্টিস্ট’, ‘ফিনিক্স’, ‘মেতসিস’, ‘অবনীল’ ইত্যাদি! অন্যদিকে তিনি শিশুসাহিত্যিক ও কিশোর ঔপন্যাসিক হিসেবেও অত্যন্ত সফল। এই শাখাতেই তাঁর প্রতিভা সর্বোচ্চ শিখর ছুঁয়েছে। তাঁর কিশোর উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘হাতকাটা রবিন’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘টি-রেক্সের সন্ধানে’, ‘স্কুলের নাম পথচারী’, ‘জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়’, ‘রাজু ও আগুনালির ভূত’, ‘বকুলাপ্পু বুবুনের বাবা’, ‘বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর’, ‘নিতু ও তার বন্ধুরা’, ‘মেকু কাহিনী’, ‘শান্তা পরিবার’, ‘কাজলের দিনরাত্রি’, ‘কাবিল কোহকাফী’, ‘দস্যি ক’জন’, ‘আমি তপু’ ইত্যাদি আরও অনেক! তাঁর একাধিক কিশোর উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।


আমেরিকাতে পড়ার সময় তিনি তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ইয়াসমিন হকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর দুই সন্তান- বড় ছেলে নাবিল ইকবাল যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন এবং কন্যা ইয়েশিম ইকবাল কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন। ইয়েশিম ইকবাল তাঁর কিশোর উপন্যাস ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ইংরেজিতে রূপান্তর করেছেন ‘Rashed, My Friend’ নামে। বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট, সাহিত্যিক আহসান হাবীব তাঁর ছোট ভাই।

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড গড়ে তোলার পিছনে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। গণিত শিক্ষার উপর তিনি ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। এর মাঝে ‘নিউরনে অনুরন’ বইটি গণিতে আগ্রহীদের কাছে খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

বাংলাদেশের অগণিত শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী নির্বিশেষে সবার জন্য ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্যার এক নিঃশর্ত অনুপ্রেরণার নাম! আরও অনেকদিন তিনি বেঁচে থাকুন আমাদের ভালোবাসায় ও শ্রদ্ধায়।

সর্বশেষ প্রকাশিত