The evolution of mobile phones: খাওয়া-দাওয়া এবং কাপড়চোপড়ের পর আজকাল আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তুটি কি?? উত্তর- মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে এতটাই সহজ করে দিয়েছে এবং দরকারি স্থান দখল করেছে যে মোবাইল ছাড়া এখন আমরা একটি মুহুর্তও কল্পনা করতে পারিনা।কারো সাথে যোগাযোগ করতে হবে? আমরা সশরিরে তার সামনে উপস্থিত না হয়ে আশ্রয় নেই মোবাইল কল বা টেক্সট মেসেজের উপর। অবসর সময় কাটাতে হবে? আমরা মাঠে না গিয়ে অথবা ঘুরতে না বেরিয়ে বসে যাই মোবাইলে গেম খেলতে কিংবা মুভি দেখতে। এখনকার স্মার্টফোনগুলোতো আমাদের চিন্তার থেকেও বেশি স্মার্ট। কিন্তু এতটা স্মার্ট কিন্তু প্রথমদিককার মোবাইল ফোন ছিলনা।
তখন এটার কাজ শুধু কল ধরা এবং রিসিভ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। মোবাইল ফোন প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৮০র দিকে মোটোরালা কোম্পানির একজন চাকরিজীবী মার্টিন কুপারের হাতে। তখন ঐটা দিয়ে শুধু কল ধরা এবং রিসিভ করাই যেত। অর্থাত্ এখনকার স্মার্ট পজিশনে আসতে মোবাইল ফোন বিবর্তিত হয়েছে প্রায় ত্রিশ বছরেরও বেশি সময়। চলুন দেখে নেই এর বিবর্তনের ধাপগুলো এবং ভবিষ্যতে কোন জায়গায় যেতে পারে আজকের স্মার্টফোন।
১৯৮৩: মোটোরোলা কোম্পানির একজন ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপারকে মোবাইল আবিষ্কার করার কৃতিত্ব দেয়া হয়। তিনি ১৯৭৩ সালে প্রথম ফোন কলটি করেন একটি ডায়নাটেক ফোন থেকে। ১৯৮৩ সালে কোম্পানিটি প্রথম মোবাইল ফোন বাজারে নিয়ে আসে। সে সময়ে এর দাম ছিল প্রায় চার হাজার ডলার। মুদ্রাস্ফিতির হিসাবে বর্তমানের প্রায় দশ হাজার ডলারের মতো!!
ফোনটি দিয়ে শুধু কলই করা যেত।যখন প্রথম ফোনটি করা হয়েছিলো তখন এর রিসিভার ছিলেন তাদেরই বিরোধি কোম্পানি AT&T এ চাকুরিরত তার বন্ধু। এরপর ১৯৮৯ সালে মোটোরোলা কোম্পানি DynaTac 9800x মডেলের একটি ফোন নিয়ে আসে যাতে ভাঁজ করা কিবোর্ড ছিল।
১৯৯২: মোবাইল ফোন বাজারে নকিয়ার প্রবেশ একটি মাইলফলক ছিল। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় ধরি নকিয়াই রাজত্ব করেছিল তা আমরা সবাইই জানি।নকিয়ার প্রথম মোবাইল ফোনটি ছিল Nokia 1011.ইউরোপে ১৯৯১ সালে GSM নেটওয়ার্ক চালু হয়। সাধারণ মানুষের জন্য মোবাইল ফোন উন্মুক্ত হতে থাকে। নকিয়া এর সুবিধা নেয় এবং বাজারে পরিচিত হয়ে ওঠে।
এই সময়ের মোবাইলগুলো যা যা করতে পারতো
- টেক্সট মেসেজ।
- গেমস খেলা।
১৯৯৭:-জার্মান কোম্পানি সিমেন্স একটি মোটামুটি স্মার্ট ফোন নিয়ে আসে, এর ডিস্প্লেতে চারটি রং ছিল। Hagenuk GlobalHandy ছিল প্রথম এন্টেনাবিহীন মোবাইল ফোন। একই সময়ে নোকিয়া কেসিংযুক্ত একটি ফোন নিয়ে আসে যাতে পুরনো হলে কেসিং বদলালে আবার নতুন মনে হয়।এরিকসন কোম্পানি প্রথম মোবাইল ফোন বাজারে প্রবেশ করে। এ সময়কার মোবাইলগুলো আরো যা যা করতে পারতো
- ইমেইল (নকিয়া 9000(1996))
- ভাইব্রেট অ্যালার্ট (মোটোরোলা স্টারট্যাক(1996))
- কালার ডিসপ্লে (সিমেনস এস 10)
১৯৯৯-২০০২: ফিচার ফোনের শুরু। নকিয়া ১৯৯৯ এ 7100 মডেলের একটি ফোন উন্মুক্ত করে যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যেত। এর এক বছর পর জাপানি কোম্পানি সার্প(Sharp) বিশ্বের প্রথম ক্যামেরা ফোনটি বাজারে আনে।
এ সময়ের ফোনগুলোর আরো কিছু বৈশিষ্ট্য:
- প্রথম ইন্টারনেট কানেকশন যুক্ত ফোন নকিয়া ৭১০০।
- ভিডিও কলিংয়ের সুবিধাযুক্ত প্রথম ফোন Kyocera VP210
- জিপিএস নেভিগেশন সিস্টেম Benefon Esc!
- Mp3 প্লেয়ারযুক্ত স্যামসং এর প্রথম ফোন SPH-M1000
- ব্লুথুট নিয়ে আসে এরিকসন কোম্পানি Ericcson R520m মোবাইলে।
- মেমোরি কার্ডযুক্ত Seimens SL45
- MMS সুবিধাযুক্ত সনি এরিকসন T68i
২০০৩-২০০৬: 3জি চালু হওয়াতে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্ল্যাকবেরি মোবাইলফোন বাজারে প্রবেশ করে তাদের BlackBerry Pearl 8100(2006) নিয়ে। সনি এরিকসন Z1010 ফোনে ফ্রন্ট ক্যামেরা নিয়ে আসে,যার কারনে ভিডিও কলিং সম্ভব হয়।
এসময়ের ফোনগুলোতে
- সর্বপ্রথম ওয়াই ফাই নিয়ে আসে Calypso C1250i.
- ওপেরা মিনি ওয়েব ব্রাউজার নিয়ে আসে মোবাইল ফোনের জন্য।
- নকিয়া তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফোনগুলোর একটি Nokia 3310 মডেল নিয়ে আসে।এটি প্রায় 126 মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি হয়।
- নকিয়া 5510 ফোনে সর্বপ্রথম কোয়ার্টি কিবোর্ড নিয়ে আসে।ফোনের ডিসপ্লেগুলো পুরোপুরি রঙিন হতে থাকে।
- নকিয়া 7650 তাদের প্রথম ক্যামেরা ফোন নিয়ে আসে।
- মোটোরোলা Razr V3 নামের একটি স্টাইলিশ ফোন বাজারে আনে। এটি বিশ্বব্যাপী প্রায় 130 মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি হয়।
- ২০০৫ এ গুগল অ্যান্ড্রয়েড কিনে নেয়।
- ২০০৬ এ Nokia N95 রিলিজ হয়।সিম্বিয়ান অপারেটিং সিস্টেমে চলা এই ফোনটিকেই স্মার্টফোনের জনক বলা যায়।১৬০ এম্বি র্যাম এবং ব্লুটুথ,ক্যামেরা এবং ওয়াই ফাই সুবিধা ছিল।
২০০৭-২০১০: ২০০৭ এর জুনে স্টিভ জবসের অ্যাপল সর্বপ্রথম আইফোন বাজারে নিয়ে আসে। পরিপুর্ন স্মার্টফোন বলতে এটিকেই বোঝানো হতো। ২০০৯ এ G1 নামের প্রথম অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোন বাজারে আসে। অ্যাপল অ্যাপ স্টোর চালু হয়।২০০৯ এ হোয়াটসঅ্যাপ চালু হয়। স্যামসং অ্যান্ড্রয়েডচালিত স্মার্টফোন নির্মান শুরু করে। ২০১০ এ আইফোন ফোর রিলিজ হয়। গুগল নেক্সাস ওয়ান নামের স্মার্টফোন নিয়ে বাজারে প্রবেশ করে।
২০১১-২০১৪: স্যামসং গ্যালাক্সি এস টু রিলিজ করে। তাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ফোনগুলোর একটি হয় এস থ্রি যেটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন জগতে বিপ্লবের সৃষ্টি করে। ২০১২ তে আইফোন ফাইভ রিলিজ হলে প্রথম সপ্তাহেই পাঁচ মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি হয়। ২০১৩ তে আইফোন ফাইভ এস এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর যুক্ত হয়। স্মার্টফোনের নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।
স্যামসং এবং আইফোনের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ২০১২ তে নকিয়া মাইক্রোসফট এর কাছে বিক্রি হয়ে যায়। মুলত অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে স্মার্টফোন বের না করায় বাজারে দখল ধরে রাখতে পারেনি নকিয়া। মাইক্রোসফটও একই ভুল করে। তারা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালিত ফোন নিয়ে আসে কিন্তু তা ততটা ইউজার ফ্রেন্ডলি ছিলনা। তাই তারাও ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ে। ২০১৫তে চুক্তি শেষ হলে নকিয়ার ব্র্যান্ড নেইম কিনে নেয় ফিনল্যান্ডের এইচএমডি গ্লোবাল(HMD Global)।
নকিয়ার প্রথম অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্ট ফোনটি হলো নকিয়া ৬। এটি ২০১৬ সালে বাজারে আসে এবং মাত্র ৫০ সেকেন্ডের মধ্যে ১৫ লাখ ইউনিট বিক্রি করে রেকর্ড সৃষ্টি করে।
২০১৫ এর পর থেকে স্মার্টফোন জগতে জায়গা করে নিতে থাকে হুয়াওয়ে, জিয়াওমি এবং অপ্পোর মতো চাইনিজ কোম্পানিগুলো। ২০১৬তে গুগল পিওর অ্যান্ড্রয়েডের পিক্সেল ফোন নিয়ে আসে। স্যামসং এবং অ্যাপল পাল্লা দিয়ে ফোন বের করতে থাকে। তবে বর্তমানে স্যামসং এগিয়ে আছে। তাদের এস ও নোট সিরিজের ফোনগুলো বাজারের অধিকাংশ দখল করে রেখেছে। ২০১৭ তে স্যামসং তাদের এস সেভেন স্মার্টফোনে ফেস লক নিয়ে আসে।স্মার্টফোন ক্যামেরাগুলো অনেক উন্নত হতে থাকে। মাল্টিটাস্কিং বা একসাথে অনেক কাজ করা যায় এমন ফোনের চাহিদা বাড়তে থাকে।ফোনগুলোর ডিসপ্লে সাইজ বাড়তে থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। সর্বশেষ তথ্যমতে বর্তমান স্মার্টফোন বাজারে ৭৪% স্যামসং এবং ২০% আইফোনের দখলে।স্যামসং এর সর্বশেষ স্মার্টফোনটি হলো গ্যালাক্সি এস নাইন এবং এটিই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক স্মার্টফোন।