রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। শরিয়তের পরিভাষায় মাহে রমজানে তারাবি নামাজ পড়াকালীন প্রতি দুই রাকাত অথবা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’।
তারাবির নামাজের নিয়ত
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
উচ্চারণ : নাওয়াইতুআন উসালিয়া লিল্লাহি তাআলা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআ’লা মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআতের সহিত নামাজ হয় তবে- ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম বলতে হবে)।
অর্থ : আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তবে- এই ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সহিত)।
যাদের আরবী উচ্ছারণ করতে সমস্যা হয় অথবা পড়তে পারেন না, তারা বাংলায় নিয়ত করতে পারবেন।
তারাবির নামাজের সহীহ নিয়ম
এশা’র চার রাকাত ফরজ নামাজ ও ২ রাকাত সুন্নত আদায় করার পর এবং বিতর নামাজের আগে তারাবীহ্ নামাজ আদায় করতে হয়।
একনজরে
- এশার চার রাকাত সুন্নত।
- এশার চার রাকাত ফরজ।
- এশার দুই রাকাত সুন্নাত।
- দুই রাকআত দুই রাকআত করে তারাবির সালাত।
- এশার তিন রাকাত বেতের।
তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
উচ্চারণ : সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুব্হানাযিল ইয্যাতি, ওয়াল আয্মাতি, ওয়াল হাইবাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়াই, ওয়াল যাবারুত। সুব্হানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।
– প্রত্যেক দুই রাকাআ’ত পর সালাম ফিরানোর পর ইসতেগফার পড়তে হয়, দুরুদ পড়তে হয়, আল্লাহর স্মরণে জিকির করতে হয়। তারপর চার রাকাআ’ত হলেও কুরআন হাদিসের দুআ’গুলো পড়া হয়; যে দুআ’গুলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পড়া হয়। কিন্তু তারাবির যে দুআ’টি বর্তমানে জারি আছে, এই দুআ’টি কোরআন-হাদিস সম্বলিত নয়; এটিও কোনো এক বুজুর্গ ব্যক্তি লিখে এর প্রচলন করেছেন, যার অর্থও ভালো বিধায় আমরা পড়ে থাকি।
তারাবি নামাজের ফজিলত
রমজান মাসে তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
তারাবির নামাজ বিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন : তারাবির নামাজ কত রাকাত?
উত্তর : তারাবির সালাত দুই রাকআত দুই রাকআত করে যেকোনো সংখ্যক রাকআত পড়া হয়। কত রাকাত হবে, রাসুলুল্লাহ (স.) তা নির্ধারণ করে যাননি। হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকআত, মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকআত এবং আহলে হাদীসরা ৮ রাকআত তারাবির নামাজ পড়েন।
প্রশ্ন : তারাবির নামাজ কি সুন্নত না নফল?
উত্তর : তারাবির নামায নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
প্রশ্ন : খতম তারাবীহ এবং সূরা তারাবীহ কি?
উত্তর : বাংলাদেশে তারাবীহর নামাজের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি খতম তারাবীহ আর অন্যটি সূরা তারাবীহ। খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়। খতম তারাবীহর জন্য কুরআনের হাফিযগণ ইমামতি করেন। সূরা তারাবীহর জন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠের মাধ্যমে সূরা তারাবীহ আদায় করা হয়।
এই রমজানে কুরআন-হাদীস বেশি বেশি অধ্যয়ন করুন। বেশি বেশি করে রমজান সম্পর্কিত ইসলামী বই পড়ুন। এবং কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।