পৃথিবীর সবাই চায় ধনী এবং সম্পদশালী হতে আপনিও নিশ্চয়ই চান? কিন্তু সঠিক ও স্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাবে নিশ্চয়ই কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। ইন্টারনেটে ‘কিভাবে অল্প বয়সে সম্পদশালী হওয়া যায়’ এমন ভিডিও দেখে এবং আর্টিকেল পড়ে পড়ে মুখস্ত করে ফেলেছেন কিন্তু আদৌ কোন সফলতার দেখা পাননি? নিরাশ কিংবা মনঃক্ষুণ্ণ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সম্পদশালী হওয়া রাতারাতি কোন ব্যাপার নয়। এটি একটি জীবন-দর্শন। সুতরাং, সম্পদশালী হবার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।ব্যাপারটি খুব একটা কঠিন নয় , প্রয়োজন শুধু একটি স্পষ্ট মানসিকতা এবং সঠিক জীবন-ব্যবস্থার। চলুন তবে কথা না বাড়িয়ে কৌশলগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
নিজস্ব ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করুন
আপনার ব্যবসা যেন সফল হয় এবং আপনি যেন একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সকলের মাঝে সমাদৃত হতে পারেন, সেজন্যে নিম্নোক্ত কিছু পয়েন্ট মাথায় রাখুনঃ
– আপনি যা-ই করছেন, সেটিকে ভালোবাসুন। এমন কোন বিষয়ে ব্যবসা শুরু করুন যেটির ব্যাপারে আপনি যথেষ্ট আগ্রহী এবং সম্পূর্ণ ধ্যান-জ্ঞান একই কাজে লাগাতে পারবেন। এটি প্রত্যেকটি সফল ব্যবসায়ীর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
– নিজের ব্যবসায়কে গুরুত্ব দিন। প্রতি মাস কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকুন। সর্বদা চোখ-কান খোলা রাখুন এবং যেখানে যেভাবে পারেন ব্যবসায় সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে থাকুন। এক্টু-আধটু ভুল হলেও কোনভাবে ভেঙ্গে পড়বেন না, বরং ভুল থেকেই শেখার মানসিকতা পোষণ করুন।
– ব্যবসায় পরিকল্পনার কৌশল অনুসরণের চেষ্টা করুন। আজ থেকে পাঁচ বছর কিংবা দশ বছর পর আপনি আপনার ব্যবসায়কে কোন পর্যায়ে দেখতে চান, তার ছক আজই কেটে ফেলুন। সুপরিকল্পিত উপায়ে এগোলে সমগ্র ব্যাপারটিই সহজ মনে হবে আপনার কাছে।
বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করুন
হাতের কাছে কিছু টাকা জমানোর পর সেগুলো বিনিয়োগ করার সুযোগ খুঁজুন। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক সংস্থাই আছে কিন্তু সেগুলোর ব্যাপারে আমরা খুব একটা জানিনা। প্রযুক্তি সম্পর্কিত কোন স্টার্ট-আপ কোম্পানি কিংবা ছোটখাটো ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে পারেন যেগুলো মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে। তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বিনিয়োগ করুন। অবশ্যই, ভালো মত খোঁজ নিয়ে তারপরেই কাজগুলো সম্পাদন করবেন।
নতুন নতুন আইডিয়ার উদ্ভাবন করুন
দর্শনবিদ্যায় একটি কথা প্রচলিত আছে যে, ‘একটি আইডিয়া কিংবা ধারণা আপনার সমগ্র জীবন বদলে দিতে পারে’। কথাটি কিন্তু একদম দিনের আলোর মত সত্য। এখানে কিন্তু কিভাবে অর্থ উপার্জন করবেন সে ধারনার কথা বলা হচ্ছে না বরং জীবনের আর্থিক এবং সামাজিক বাধাসমূহ কিভাবে এড়িয়ে চলবেন সে উপায়ের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়- ল্যারি পেইজ এবং সার্জি ব্রিন গুগল উদ্ভাবন করেছেন। মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক, লালিত মোদি আইপিএল এর চিন্তা মাথায় এনেছেন, জ্যান কৌম হোয়াটসঅ্যাপ আবিষ্কার করেছেন। আপনিও এমন কিছু ধারনা মাথায় আনতে পারেন যেটি আপনার এলাকা, সমাজ কিংবা দেশের জন্যে নতুন।
অযাচিত খরচ করা বন্ধ করে ফেলুন
অতিরিক্ত ব্যয়বহুল পোশাক, জুতো, রোদচশমা কিংবা গহনার চলন্ত বিলবোর্ড হবার কোন দরকার নেই। নিজস্ব বাড়ি এবং গাড়িকে এমনভাবে সাজানোর কী দরকার যখন সেটি আপনার মাসিক বাজেটকে অতিক্রম করে ফেলে? আপনি যদি সত্যিই সম্পদশালী হতে চান তবে এ অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনাকে অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় খরচ করা এড়িয়ে চলতে হবে এবং প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট পরিমাণে কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে হবে। আজ থেকেই না হয় শুরু করুন এ অভ্যাস?
কঠোর পরিশ্রম করে ব্যক্তিগত আয় বৃদ্ধি করুন
শুনে ভড়কে গিয়েছেন? কীভাবে বাড়াবেন ব্যক্তিগত আয়? আপনি যদি নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চাকরী করেন তাহলে নিজের বর্তমান ক্যারিয়ারের দিকেই মনোনিবেশ করুন। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অর্জন ধীরে ধীরে উন্নত করার চেষ্টা শুরু করুন আজ থেকেই। চাকরীকে শুধুমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে গ্রাহ্য না করে ক্যারিয়ার উন্নত করার সূচক হিসেবে গ্রহণ করুন। সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করুন এটির প্রতি, তবেই আপনি ভালো কিছু করার আশা করতে পারবেন।
ওয়েবসাইট কিংবা ব্লগ তৈরি করুন
কোন বিষয়ের প্রতি আপনার অত্যধিক শখ কিংবা আগ্রহ আছে? সেটি হতে পারে ফুটবল, গাড়ি, কোন সেলিব্রিটি, গেইম খেলা, গান শোনা কিংবা যেকোন ব্যাপার। প্রথমে একটি ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইট তৈরি করুন সে সম্পর্কে এবং নিজের মতামত ব্যক্ত করা শুরু করুন জনসাধারণের উদ্দেশ্যে। এক্ষেত্রে, উন্নত বিপণন ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজের ব্লগকে একটি সমৃদ্ধ করে নিন।
অভিজ্ঞ মার্কেটার হিসেবে যাত্রা শুরু করতে হলে আপনার অবশ্যই একটি ওয়েবসাইট থাকতে হবে যেখানে আপনি আপনার রিভিউ এর লিংকগুলো প্রকাশ করতে পারবেন।
সঞ্চয়ী হোন
অন্য কোন কৌশল অবলম্বন করতে যত সময়ই নেন না কেন আপনি, এটি আজ থেকেই আরম্ভ করুন। বাবা-মা কিংবা শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে দেখুন যে কোন প্রক্রিয়ায় আপনি খুব দ্রুত সম্পদশালী হয়ে উঠতে পারবেন। প্রতি মাসে অন্তত ১,৫০০ টাকা জমান এবং ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়ান। এক বছরের মধ্যে দেখবেন বেশ অনেক পরিমাণ টাকা জমে গিয়েছে। অযথা যেকোন খরচ বাদ দিলে খুব সহজেই কোন ধরনের ঝক্কি ছাড়াই আপনি অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন।
আত্মবিনিয়োগ করুন
পড়াশোনা শেষ করে সন্তোষজনক ডিগ্রী অর্জন করুন। আপনি যদি পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করেন তাহলে সে আয় দিয়ে নিজস্ব খরচ নির্বাহ করুন। আপনি চাইলে নতুন কোন কাজ শিখতে পারেন কিংবা নতুনভাবে নিজের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। যেমন- স্বাস্থ্যমসম্মত খাবার খাওয়া, শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলা।
এ অভ্যাসগুলো গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি শুধুমাত্র নিজের আত্মবিশ্বাস এবং কর্মঠই করবেন না, বরং এর সঙ্গে আপনার প্রফেশনাল আয় বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি খুব দ্রুত সম্পদশালী হয়ে উঠবেন।
বড় বড় স্বপ্ন দেখতে কোন মানা নেই। অল্প বয়সে সম্পদশালী হবার জন্যে হাজার হাজার উপায় আছে। সৎ পথে চলুন, নির্দিষ্ট কিছু কৌশল খুঁজুন এবং সেগুলোতেই সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করুন। শুভকামনা রইলো।