অকালে চুল পেকে যাবার মতো বিব্রতকর সমস্যায় ভুগতে হয় অনেকেই। এই সমস্যাটি যে কোন বয়সের ছেলে অথবা মেয়ের দেখা দিতে পারে। অকালে চুল পেকে যাবার পেছনে থাকতে পারে বিশেষ কিছু কারণ। তার মাঝে অন্যতম কিছু কারণ হল জিনগত সমস্যা, বংশগত সমস্যা, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, চুলে মেলানিনের অপ্রাতুলতা প্রভৃতি। এছাড়াও আরও অনেক কারণে চুল পেকে যাবার সমস্যাটি দেখা দেয়।
যাদের অকালে চুল পেকে যাবার সমস্যাটি রয়েছে তারা অনেক সময় এ থেকে পরিত্রান পাবার উপায় খুঁজে থাকেন,কিন্তু সঠিক সমাধান পাচ্ছেন না। আজকের এই লেখাতে আমি খুব সহজ কিছু উপাদান ব্যবহার করে সহজ উপায়ে চুল পেকে যাবার প্রতিকার তুলে ধরলাম। এই সকল উপাদান চুলে পুষ্টি জোগাতে এবং চুলে মেলানিন এর মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে সাদা হয়ে যাওয়া চুল গাঢ় হতে শুরু করে।
পেঁয়াজের রস
পেঁয়াজে থাকা কিছু বিশেষ এনজাইমের জন্যে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা কমে যায়। ক্ষেত্র বিশেষে বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল কালো হতে শুরু করে। নিয়মিত ভিত্তিতে চুলে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে খুব ভালো ও দ্রুত উপকার পাওয়া সম্ভব হয়।
ব্যবহারবিধি
পেঁয়াজ ছেঁচে নিয়ে তার রস চুলের গোঁড়ায় সরাসরি লাগাতে হবে। পুরো মাথার চুলে পেঁয়াজের রস লাগানো হয়ে গেলে ২০-৩০ মিনিট সময় অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ঠাণ্ডা অথবা সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহারে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যাবে।
রঙ চা
রং চা সাদা হয়ে যাওয়া চুলের সমস্যা দূর করতে এবং চুলের রঙ গাড় করতে খুব ভালো কাজ করে থাকে। এটা চুলের পুষ্টি জোগাতে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে থাকে।
ব্যবহারবিধি
এক কাপ পরিমাণ রঙচা তৈরি করে সেটা ঠাণ্ডা করে এরপর চুলে দিতে হবে। চুলে পানিটি দেওয়ার পর ১৫-২০ মিনিট সময় অপেক্ষা করে এরপর সাধারণ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
মেহেদীপাতা
চুলের পেকে যাওয়ার সমস্যার ক্ষেত্রে অন্যতম সহজ সমাধান হলো মেহেদীপাতা ব্যবহার করা। সাদা হয়ে যাওয়া চুলকে একদম গোঁড়া থেকে পুষ্টি জোগাতে এবং চুলের সাদাভাব ঢেকে ফেলতে মেহেদীপাতা সবচাইতে দারুণ কাজ করে। চুলের পাকাভাব কমানোর পাশাপাশি চুলকে শক্ত করার জন্যেও মেহেদীপাতা দারুণ উপকারী প্রাকৃতিক উপাদান।
ব্যবহারবিধি
মেহেদীপাতা ভালোভাবে বেটে নিয়ে সেটা চুলের গোঁড়া থেকে শুরু করে একদম আগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর এক ঘণ্টা সময় কিংবা তারও অধিক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যেন চুলের মেহেদী বাটা শুকিয়ে আসে। শুকিয়ে গেলে হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
আমলকী
চুলের যেকোন সমস্যার ক্ষেত্রে আমলকীর ব্যবহার অগন্য। আমলকী রক্ত চলাচলের উপর প্রভাব ফেলে থাকে বলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। একইসাথে প্রাকৃতিক এই উপাদান চুলের মেলানিন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
ব্যবহারবিধি
নারিকেল তেলের সাথে আমলকির রস মিশিয়ে নিয়ে হালকা তাপে গরম করতে হবে। এরপর কুসুম গরম আমলকী তেল মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ মিনিট ধরে ম্যসাজ করতে হবে। ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে এক ঘণ্টা মাথায় তেল রেখে দেওয়ার পর হারবাল যেকোন শ্যাম্প্যু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এই উপায়ে আমলকী তেল তৈরি করে চুলে যত্ন করে লাগালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা কমে যাবে এক মাসের মাঝেই।
আলুর খোসা
জনপ্রিয় সবজী আলু আমাদের সবার বাসাতেই থাকে। আলুর খোসা ছিলে ফেলার পর নিশ্চয় ফেলে দেওয়া হয়। তবে আজকে আলুর খোসার চমৎকার এই ব্যবহারটি জানার পরে আলুর খোসা আর ফেলে দেবার প্রয়োজন হবে না। আলুর মতো আলুর খোসাতেও থাকে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ অথবা শ্বেতসার। যা খুব দারুণভাবে চুলের পেকে যাবার সমস্যার ক্ষেত্রে সমাধান স্বরূপ কাজ করে থাকে।
ব্যবহারবিধি
এক মুঠো আলুর খোসা ফুটন্ত পানিতে দিয়ে দিতে হবে। ৫ মিনিট সময় পর চুলার আগুন বন্ধ করে দিতে হবে। এরপর পাতিলের পানি ঠাণ্ডা করে ফেলতে হবে। আলুর খোসাগুলো ছেঁকে ফেলে দিয়ে এই পানিটি দিয়ে চুল খুব ধীরে ধীরে ধুয়ে ফেলতে হবে। পাঁচ মিনিট সময় চুলে এই পানি রেখে দেবার পর হালকা উষ্ণ পানির সাহায্যে চুল আবারও ধুয়ে ফেলতে হবে।